নাইজেরিয়ান স্কেমাররা যখন এই দেশে সাকসেসফুলি কাজ করে।
এটা পড়ে ভিকটিমকে বোকা ভাবার কারন নেই। ফিতনায় যখন মানুষ পড়ে যায়, তখন তার বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। এটা আমি হতে পারি, বা আপনি বা আমাদের মাঝে সবচেয়ে চৌকস ব্যক্তি। চলে গেলে তখন ভাবে আমি কি চিন্তা করে এমন করেছি? এটা তো অবভিয়াস ছিলো!
সহজ লোকেরা প্রতারিত হয়। সমাধান হলো দ্বিনের আহকামগুলো জেনে সেগুলো শক্ত ভাবে অনুসরন করা।
এগুলোকে বলে Advance fee scam. আপনার কাছে এডভান্স চাইবে পরে অনেক ভালো কিছু দেবার কথা বলে। ইসলামের হুকুম হলো মাল না দেখে শুধু ধারনার উপর কিছু না কেনা। এ জন্য "পুকুরের সব মাছ এত টাকায় বিক্রি করে দিলাম" -- এটা করা যায় না। ধরে গুনে বিক্রি করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের জালেম বা মজলুম হওয়া থেকে রক্ষা করুন।
খবর: copy and paste_________
ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে দুইজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হলো ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে একজনের কাছ থেকে নেওয়া হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা, অন্যজনের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৪০ লাখ টাকারও বেশি।১৫ লাখ টাকা খোয়ানো ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে প্রতারক চক্রের একটি অংশকে আটক করেছে গোয়েন্দারা। তবে গা ঢাকা দিয়েছে তাদের বাকি সহযোগিরা।
প্রতারণার শিকার ভোলার চরফ্যাশনের ওষুধ ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানের গল্পটা এমন:
হঠাৎ একদিন ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে Prisca Khalifa (প্রিসকা খালিফা) নামের এক বিদেশি মেয়ের কাছ থেকে। না বুঝেই একসেপ্ট করলেন কামরুজ্জামান। এরপর ধীরে ধীরে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং, প্রিসকা খালিফার মায়াজালে আটকে যান গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মধ্যবয়সী কামরুজ্জামান।
চ্যাটিংয়ের এক পর্যায়ে মেয়েটি জানায়, সে আফ্রিকার এক রিফিউজি ক্যাম্পে আটকা পড়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে। করুণা হয় কামরুজ্জামানের। অনুভূতি শেয়ার করতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের গল্প বলে প্রিসকা খালিফা। জানায়, তার বাবা মৃত ড. ডেভিড উইলসন খালিফার (DR. David Wilson Khalifa) নামে লন্ডনের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৮ লাখ ইউএস ডলার জমা আছে। কিন্তু প্রিসকা খালিফা বর্তমানে খুবই অসহায় অবস্থায় আছে এবং এতগুলো টাকার উত্তরাধিকারী হয়েও সে টাকাটা তুলতে পারছে না। এখন যদি কামরুজ্জামান তাকে একটু সাহায্য করে তাহলেই সে টাকাটা পেয়ে যেতে পারে। আর এতে যদি কিছু টাকা খরচও হয় কামরুজ্জামানের নিজের পকেট থেকে। সেটাও যেন তিনি করেন, কেন না ৩৮ লাখ ডলার হাতে এলেই প্রিসকা তার সব খরচ সুদে-আসলে মিটিয়ে তাকে টাকার ভাগও দেবেন।
কামরুজ্জামান এমন প্রস্তাবে গলে গেলেন। কিন্তু লন্ডনের ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত আনতে ইংরেজিতে যোগাযোগ করার মতো অত চৌকস তো তিনি নন। প্রিসকা সে সমস্যারও সমাধান করে দিলেন। কামরুজ্জামানকে তার নিয়োগ করা ব্যারিস্টার ইব্রাহিম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিল প্রিসকা। প্রিসকার কথা শুনে ওসমানকে ই-মেইল করেন কামরুজ্জামান। প্রথমেই ব্যারিস্টার সাহেব কামরুজ্জামানকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র অ্যাফিডেভিড করার জন্য এক হাজার ২৮০ মার্কিন ডলার পাঠানোর পরামর্শ দেন।
পরামর্শ মেনে কামরুজ্জামান ব্যারিস্টার ইব্রাহিম ওসমানকে পরিচয়পত্র আর টাকা পাঠাতে রাজি হন। ব্যারিস্টার ওসমান তাকে লিজা আক্তার নামে সিটি ব্যাংক লিমিটেড এর অ্যাকাউন্ড নম্বর দেন। ২৪০১৭৬০২৫৩০০১ এই নম্বরে সিটি ব্যাংকের উত্তরা শাখায় ১২৮০ ডলারের এর সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা জমা দেয়ার অনুরোধ করেন। কথামত লিজা আক্তারের একাউন্টে কামরুজ্জামান ১০২,১৪৪ (একলক্ষ দুইহাজার একশ চুয়াল্লিশ) টাকা জমা করেন।
ব্যারিস্টার ইব্রাহিম ওসমান তার কাছে প্রিসকা খলিফার বাবার ব্যাংকের টাকা নেবার জন্য কামরুজ্জামানকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কিছু কাগজপত্র পাঠান।
এরপর ব্যারিস্টার ওসমান জানান, কামরুজ্জামানের নামে টাকা ট্রান্সফার করার জন্য তাকে ব্রিটিশ হাইকোর্ট থেকে ফাইনাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে এবং ব্যারিস্টার সাহেবের লন্ডন যাওয়া-আসার খরচ বাবদ তাকে সাত হাজার সাতশ পঞ্চাশ ইউ এস ডলার দিতে হবে। কামরুজ্জামান ভাবলেন প্রিসকার টাকা তো হাতে এলো বলেই। তাই তিনি আবারো লিজা আক্তারের সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নগদ পাঁচ লাখ নয় হাজার টাকা নগদ জমা করলেন।
এবার আরেক অযুহাতে ব্যারিস্টার সাহেব কামরুজ্জামানকে আবারো টাকা পাঠাতে বললেন। এবার পাল্টে গেলো ব্যাংক একাউন্টও। ইব্রাহিম ওসমান এবার সিটি ব্যাংক লিমিটেড এর M/S Mohsin Plambing Service Center নামে (একাউন্ট নাম্বার ১৪০১৮৮৪১২২০১) ছয় হাজার পাঁচশ ডলার এবং একই নামে (অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১১৭১১০৩১৬৮৬) ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর এক হাজার ৩০০ ডলার পাঠানোর অনুরোধ করেন। কামরুজ্জামান টাকা পাঠান।
আবারো আসে নতুন বাহানা আসে নতুন একাউন্টের ঠিকানা। MM International নামের আরেক কোম্পানির (অ্যাকাউন্ট নাম্বার ০২৪১৩৩০০১৮৮৬৮) সোশাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটডের একাউন্টে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়ার কথা নির্দেশ আসে। কামরুজ্জামান এবারও টাকা পাঠিয়ে দেন।
এরপর DR. Philip Roy Hampton (ড. ফিলিপ রয় হ্যাম্পটন) নামের জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে ইমেইল আসে কামরুজ্জামানের নামে। সেখানে বলা হয় তার একাউন্টে খুব শিগগির চার লাখ দশ হাজার ডলার জমা পড়বে। কিন্তু ছোট্ট একটা ঝামেলা আছে। ব্যারিস্টার ইব্রাহিম ওসমান তাকে জানালেন যে, চার লাখ দশ হাজার ইউ এস ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রে একটু জটিলতা হয়েছে। বৃটিশ ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ এর জন্য ৩১,৫০০ (একত্রিশ হাজার পাঁচশত) পাউন্ড ট্যাক্স দাবি করেছে। আর এ টাকাটা না দিলে প্রিসকা খালিফার চার লাখ দশ হাজার ডলার তার নামে ট্রান্সফার করা যাবে না।
এতক্ষণে টনক নড়ে কামরুজ্জামানের। এবার তিনি বুঝতে পারেন তাঁর জমির বন্ধক রাখা টাকা, সারা জীবনের সঞ্চয়সহ সুদের উপরে গ্রহণ করা ঋণের টাকা সবই প্রতারক চক্রের প্রতারণায়, মিথ্যা মায়াজালে জড়িয়ে খুইয়ে ফেলেছেন। পাগলের মতন তিনি ছুটে আসেন ডিবি কার্যালয়ে। খুলে বলেন তার সাথে ঘটে যাওয়া প্রতারণার কথা। কামরুজ্জামানের কথা শুনে ডিবির এডিসি শাহজাহান পিপিএম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
ডিবি উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম কাজে নেমে পড়েন। সঙ্গে এডিসি শাহজাহান পিপিএম এবং সিনিয়র এসি গোলাম সাকলায়েন সহ ডিবি উত্তর এর ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। তাদেরই তৎপরতায় ব্যাংক একাউন্টের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় লিজা আক্তার তার কথিত স্বামী নাইজেরিয়ান জন আগডি ইউজিও (John Agodi UGO), আফেজ (Afeez), মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন (Mikel Eugene brown), নামডি কেলভিন (Nnamdi Kelvin) M/S Mohsin Plambing Service Center এর মালিক মহসিন শেখ ও তার স্ত্রী তাসমিয়া পারভীন ওরফে শিমুকে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার ‘ধরা’ আরো বেশি তাদের ধরা পড়ার খবর শুনে ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেন আরেক ভুক্তভোগী জনাব শাহনুর হোসেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের ৪০ লাখ ৩৮ হাজার টাকার পুরোটাই খুইয়েছেন এই একই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে।
ধরা পড়ার পর তারা এই অভিনব প্রতারণার গল্প শোনান ডিবি কর্মকর্তাদের। লিজা আক্তার, মহসিন শেখ, মহসিনের স্ত্রী তাসমিয়া ভুল বর্তমান ঠিকানা দিয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। তাদের এই হিসাব ব্যবহৃত হয় প্রতারিত ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদায়ে। আর এর বিনিময়ে তারা পায় ১০ শতাংশ কমিশন।
বিপ্লব লস্কর, রেজা ম্যানেজার, পার্টনার কামাল সহ মধ্যস্বত্বভোগীরা পা পাঁচ শতাংশ করে। তাদের কাজ লিজা আক্তার, মহসিনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন (Mikel Eugene Brown), নামডি কেলভিন (Nnamdi Kelvin), জন আগডি ইউজিও (John Agodi UGO) প্রমুখের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ধরা পড়া নাইজেরিয়ানদের জিজ্ঞাসাবাদে ও তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত ল্যাপটপ, মোবাইল অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এদের মূল হোতা ভিন্ন ভিন্ন ভূয়া নামধারী বিদেশশি (Wnname), যারা কেউ কেউ সেনেগাল, কেউ কেউ আফ্রিকায় আছে।
যদিও এখনো অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর পাওয়া যায়নি। প্রিসকা খালিফা সেজে কামরুজ্জামানের সাথে চ্যাট করত কে? ব্যারিস্টার ইব্রাহিম ওসমানই বা কে? তারা কোথায় আছেন? সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও, তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে দেশের ভেতরেই ভালো মানুষের বেশে লুকিয়ে তারা।
Comments:
- আমি জবাব দেই "Thank you." বলে :-)
30-Jul-2017 2:10 pm