পুরুষ ও মহিলাদের নামাযে পার্থক্য৷
প্রশ্ন
কিছুদিন যাবৎ একটি মহল থেকে শুনা যাচ্ছে যে, পুরুষ মহিলার নামাযে কোন পার্থক্য নেই৷ কুরআন হাদীসে নাকি কোন পার্থক্যের কথা নেই৷ এতে জনসাধারন মারাত্বক বিভ্রান্তিতে পড়েছে৷ বিশেষ করে ইন্টার্নেটে একশ্রেনীর লোকেরা সরলমনা ইসলামপ্রীয় মেয়েদের কে বিভ্রান্ত করছে৷ তারা জর্জরিত হচ্ছে বহু সমস্যায়৷ মুফতী সাহেবের নিকট আকুল আবেদন এ বিষয়ে হাদীস মুতাবিক সঠিক সমাধান দিয়ে মুসলিম বোনদের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন৷
উত্তর
আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে৷ বিশেষ হেকমতের কারনেই মানুষকে পুরুষ ও মহিলা দুটি শ্রেনীভুক্ত করেছেন৷ মানুষ হিসেবে দুশ্রেনীর মাঝে ব্যবধান না থাকলেও বিশেষ কিছু দিক বিবেচনায় অনেক পার্থক্য রয়েছে৷ পার্থক্যের দিকটি বাহ্যিক জীবনে যেমন গুরত্ব দেয়া হয়েছে৷ ইবাদতের ক্ষেত্রেও পার্থক্যগুলো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷ যেমন-
১৷ মহিলা পুরুষ উভয়ের উপর হজ্ব ফরজ৷ কিন্তু মহিলা যদি সফরের দুরত্ব থেকে আসে তাহলে পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে তার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা শর্ত৷ (দলিল বুখারী হাঃ ১০৮৬; মুসলিম হাঃ ১৩৩৮)
২৷ ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ৷ অথচ মহিলাদের জন্য মাথা ঢাকা ফরজ৷ ( আবু দাউদ হাঃ ১৮৩৩; বায়হাকী ৯১২৮)
৩৷ পুরুষ উচু আওয়াজে তালবিয়া পড়বে, অথচ মহিলারা নিম্ন আওয়াজে পাঠ করা জরুরী ( দারাকুতনী হাঃ ২৮৪১)
৪৷ মহিলাদের রমল নিষেধ৷ পুরুষ রমল করবে৷ ( দারাকুতনী ২৭৪০)
৫) হালাল হওয়ার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডাবে ৷ মহিলাদের মাথা মুন্ডানো হারাম ৷ ( দারাকুতনী ২৬৪০)
৬৷ পুরষের সতর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত৷ মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুর্ন শরীর৷ ( তিরমিযি হাঃ ১১৭৩)
৭৷ আযান ইকামত পুরুষের জন্য মহিলাদের জন্য নয়৷ ( বায়হাকী হাঃ ১৯৫৯,১৯৬৩)
৮৷ ইমাম খতিব হওয়া পুরুষের কাজ মহিলাদের নয়৷ (বুখারী হাঃ ৪৪২৫, মুসতাদরাকে হাকেম,হাঃ ৭৯৫২)
৯৷ জুমার নামায পুরুষের জন্য ফরজ, মহিলাদের নয়৷ ( বায়হাকী ১৯৬০)
এছাড়াও বহু বিষয়ে পুরুষ মহিলার মাঝে পার্থক্য রয়েছে৷
উপরোক্ত মাসালাগুলোতে লক্ষনীয় বিষয় হলো, অনেক কাজ ফরজ হওয়া সত্বেও মহিলাদের পর্দার বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের জন্য সতন্ত্র হুকুম দেয়া হয়েছে৷
ঠিক তেমনি নামাযের মধ্যেও পুরুষ মহিলার বহু পার্থক্য রয়েছে৷ নিম্নে তা সংক্ষেপে হাদীস সহ উল্যেখ করা হলো৷
১৷ তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষ কান পর্যন্ত হাত উঠাবে ৷ মহিলারা বুক পর্যন্ত৷ ( জুযয়ে রফয়ে ইদাইন পৃ ১৪, মুজামুল কাবীর হাঃ ২৪৯০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাঃ ২৪৮৬, ২৪৮৭)
২৷ তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষ চাদর থাকলে ভিতর থেকে হাত বের করবে মহিলারা ওড়নার ভিতর থেকে হাত বের করবে না৷ ( তিরমিযি হাঃ ১১৭৩, ইবনে হিব্বান হাল ৫৫৯৮, ৫৫৯৯,
৩৷ হাত উঠানোর সময় পুরুষ হাত বুকে মিলাবে না৷ মহিলারা বুকের সাতে মিলিয়ে রাখবে৷ ( মুসান্নাফে আব্দুর রজ্জাক ৫০৮০, ইবনে আবি শাইবা ২৪৮৯)
৪৷ পুরুষ হাতের আঙ্গুল সর্বাবস্থায় সাভাবিক রাখবে, মহিলারা মিলিয়ে রাখবে৷ ( ইবনে আবি শাইবা হাঃ ২৭৯৪)
৫৷ পুরুষ হাত নাভির নিচে বাধবে, মহিলাগন বুকের উপর বাধবে, কারন বুকে হাত বাধলে সতরের জন্য অধিক উপযুক্ত৷ ( তিরমিযি হাঃ ১১৭৩)
৬৷ পুরুষ ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা বাম হাতকে শক্ত করে ধরবে৷ মহিলারা আলত ভাবে রাখবে৷ ( বুখারী হাঃ ৭৪১, ৪১৮)
৭৷ দাড়ানোর সময় মহিলারা দু পা মিলিয়ে রাখবে৷ পুরুষ দুপায়ে মাধ্যখানে ফাকা রাখবে৷ ( ইবনে আবি শাইবা হাঃ ২৭৯৪)
৮৷ মহিলারা সবসময় ক্বেরাত আস্তে পড়বে৷ ( বুখারী হাঃ ৬৮৪,১২০১, ১২০৪)
৯৷ রকুতে পুরুষের মাথা, কোমর, পিঠ সমান থাকবে৷ মহিলারা পুরোপুরি ঝুকবে না, হাত হাটু পর্যন্ত পৌছে পরিমান ঝুকবে৷ কারন এভাবে অধিক পর্দা হয়৷
১০৷ মহিলারা রুকুতে উভয় পায়ের গোড়ালি মিলিয়ে রাখবে, পুরুষ ফাকা করে রাখবে৷
১১৷ মহিলারা বাহুদ্বয় পাজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে ৷ পুরুষ মিলাবে না৷
( ইবনে আবি শাইবা হাঃ ২৭৯৪)
১২৷ রুকুতে পুরুষ উভয় হাতে হাটু শক্ত করে ধরবে মহিলারা সাভাবিক রাখবে৷ ( বুখারী হাঃ ৫৬৭৩, ৬৪৬৩)
১৩৷ রুকুতে মহিলারা হাতের আঙ্গুল মিলিয়ে রাখবে৷ পুরুষ ছড়িয়ে রাখবে৷ ( ইবনে আবি শাইবা ২৭৯৪)
১৪৷ সিজদায় পুরুষ উভয় হাত কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত জমিন থেকে উপরে রাখবে, মহিলারা জমিনে বিছিয়ে রাখবে৷ (বায়হাকি হাঃ৩২৮৫,৩২৮৬)
১৫৷ সেজদায় পুরুষ পেট উরু থেকে পৃথক রাখবে৷ মহিলারা মিলিয়ে রাখবে৷ ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাঃ ৫০৮৬, ইবনে আবি শাইবা ২৭৯৬)
১৬৷ সেজদায় পুরুষ বাহু পাজর থেকে পৃথক রাখবে, মহিলারা মিলিয়ে রাখবে৷ ( ইবনে আবি শাইবা হাঃ২৭৯৭)
১৭৷ সেজদায় পুরুষ পায়ের পাতা খাড়া রাখবে৷ মহিলারা ডান দিক দিয়ে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখবে৷ ( মুসান্নাফে আব্দুর রজ্জাক হাঃ ৫০৮২)
১৮৷ বসার ক্ষেত্রে পুরুষ বাম পায়ের উপর বসবে, মহিলারা নিতম্বের উপর বসবে৷ ( বায়হাকি ৩২৮৩, ইবনে আবি শাইবা ২৭৯৯)
১৯৷ পুরুষ বাম পা বিছিয়ে রাখবে, মহিলারা উভয় পা ডান দিকে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখবে৷ ( ইলাউস সুনান ৩/২৭)
২০৷ পুরুষ উভয় উরু স্বাভাবিক রেখে বাম পায়ের পাতার উপর বসবে, মহিলারা উভয় পায়ের উরু মিলিয়ে রাখবে৷ (বায়হাকি হাঃ ৩২৮৩)
২১৷ পুরুষ বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে ডান পা খাড়া রাখবে৷ মহিলারা ডান পায়ের গোছা বাম বায়ের গোছার উপর রাখবে৷ (বায়হাকী হাঃ ৩২৮৩)
২২৷ পুরুষ বসাবস্থায় হাতের আঙ্গুল স্বাভাবিক রাখবে৷ মহিলারা মিলিয়ে রাখবে৷ (যখীরা ২/১৯৩)
২৩৷ নামাযে পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত ঢাকা ফরজ৷ আর মহিলাদের জন্য চেহারা হাত কব্জি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ব্যতিত সম্পুর্ন শরীর ঢেকে রাখা ফরজ৷ (তিরমিযি হাঃ ১১৭২)
উল্লিখিত বর্ননা থেকে হাদীসের আলোকেই স্পষ্টভাবে প্রমানিত যে, পুরুষ ও মহিলার নামায এক রকম নয়৷ বরং বহু পার্থক্য রয়েছে৷
যারা বলে পার্থ্য নেই৷ তাদের হাদীসের নুন্যতম জ্ঞান রাখে না৷ গ্রহনযুগ্য কোন দলিল প্রমানের উপর ভিত্তি না করেই এসব অবান্তর কথা বলে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে৷
আল্লাহ তায়ালা এসব ফেতনাবাজদের ফেতনা থেকে সকলকে, বিশেষ করে মা বোনদের কে রক্ষা করুন৷ সহীহ বুঝে আমল করে উভয় জগতে ধন্য হওয়া তৌফীক দান করুন৷ আমীন৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
10-Oct-2017 8:49 am