আধুনিক যুগের খাওয়ারিজদের ইতিহাস, শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের বই থেকে:
__________
আধুনিক কালে খাওয়ারিজদের ফিতনা শুরু হয় মিশরে, শূকরী মুস্তফার প্রতিষ্ঠিত ‘জামা’আতুল মুসলিমীন’ নামক দলের মাধ্যমে। ঢালাওভাবে সবাইকে তারা তাকফির করতো। এমনকি তাদের তাকফির থেকে আলেম উলামারাও বাদ পড়তো না। সহজ কথায় তাদের অবস্থা ছিল হয় তুমি আমাদের সাথে আছো নইলে তুমিও একজন কাফের। সাধারণ মানুষ এ কারনে তাদেরকে ‘জামাআত আত-তাকফির ওয়াল হিজরাহ’ নামে চিনতো। তাকফির অর্থ কাউকে কাফির বলা এবং হিজরাহ বা হিজরত অর্থ পরিত্যাগ করা। এ দলের মূলনীতি ছিল তারা ছাড়া সমাজের সকল মানুষই কাফির এবং কাফিরদের সমাজ থেকে হিজরত করে তাদের সমাজে না যাওয়া পর্যন্ত কেউ মুসলিম বলে গণ্য হবে না। ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে তারা মিসরের সুপ্রসিদ্ধ আলেম ও গবেষক ড. মুহাম্মাদ হুসাইন যাহাবীকে অপহরণ করে এবং পরে তাঁকে হত্যা করে। শাইখ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম (রহঃ) তাঁর ‘তাফসীরে সূরা তাওবা’য় তাদের নিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কারারুদ্ধ শাইখ হুযাইফীর কাছে শূকরী মুস্তফার অনুসারী যুবকেরা এসে জানতে চাইলো, মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুন নাসের কি কাফের হয়ে গেছে?
শাইখ হুযাইফী বললেন, আমি তাকে কাফির বলি বা না বলি তাতে লাভ কি? শাইখ হুযাইফী স্পষ্ট উত্তর দিলেন না। যুবকেরা ক্ষেপে গিয়ে তাকেও তাকফীর করলো।
এ ধরনের মতবাদপুষ্ট এক যুবকের সাথে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা করে শাইখ আযযাম বলেন-
একদিন এক যুবক এল। সে প্রায়ই আমার নিকট আসত। আমাকে মহব্বত করত। ইতোমধ্যে সে শূকরী মুস্তফাকে পেয়ে বসল। তার কথাবার্তা ও মতাদর্শে সে বিমুগ্ধ হল। সে প্রায়ই আমার নিকট এসে ইফতার করত। আমি তখন কায়রোতে ছিলাম। একদিন শূকরী মুস্তফার সাথে দেখা সাক্ষাত করে সে আমার নিকট এল। বিভিন্ন কথা-বার্তা হল। নামাযের সময় হল। দেখলাম সে আমার পিছনে নামায আদায় করতে ইতস্তত করছে। আমি তখন বললাম এসো আজ তুমি ইমাম হও। আমরা তোমার পিছনে নামায আদায় করি। আরেক দিন ঠিক এমন অবস্থা হল। আমি তখন তাকে বললাম সত্যি করে বলতো, আমার ব্যপারে তোমার কি ধারনা? সে বলল, স্পষ্ট করে বলব? আমি বললাম, হ্যাঁ স্পষ্ট করে বল। সে বলল, আমি আপনাকে কাফির মনে করি। আমি বললাম কেন? কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে তোমার এ ধারনা হল? সে বলল, আপনি ইখওয়ানুল মুসলিমীনের একজন সদস্য, তাই। সে বলল, ইখওয়ানের সবাই কাফির। আমি বললাম কেন? সে বলল, কারন, তারা কাফির হুযাইফীকে কাফির মনে করে না।
আমি তার কথা শুনে বিস্ময়ে হতভাগ হয়ে গেলাম। বললাম, বেশ তাহলে শোন, ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) অলসতা করে নামায পরিত্যাগকারী সম্পর্কে মতবিরোধ করেছেন। ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, তাকে কাফির বলা যাবে না। আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন, তাকে কাফির বলতে হবে। তারা মতবিরোধ করেছেন। তবে এই কারনে একে অপরকে কাফির বলেন নি।
সুবহানাল্লাহ। সাথে সাথে সে বলে উঠলো, আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে ইমাম শাফেয়ীর সাথে ঝগড়া করতাম। যদি তিনি তাঁকে কাফির না বলতেন, তাহলে আমি তাঁকে কাফির বলতাম। আমি বললাম লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিলাহ। বেশ তুমি যাও। তোমার সাথে কোন কথা নেই। [তাফসীরে সূরা তাওবা]
(collected)