মাজহাব : আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির।
যে কারনে উনাকে শ্রদ্ধা করতাম। এগুলো উনার থেকে আমি শিখেছি তা না। বরং নিজে যেভাবে দেখতাম, উনি সেটাই বলতেন।
paste ____________
মাযহাব বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.
...
ইসলাম মূলত বৈচিত্র্যময়। সাহাবিদের যুগ থেকেই কেউ রফ'উল ইয়াদাইন করেছেন,কেউ করেননি। কেউ হাত ঝুলিয়ে রেখেছেন,কেউ হাত বেঁধেছেন। কেউ তিন রাকাত বিতর পড়েছেন, কেউ এক রাকাত পড়েছেন, কেউ পাঁচ রাকাত পড়েছেন। আবু হানিফার যুগেও ছিল, শাফেঈর যুগে ছিল, আহমাদ ইবনু হাম্বালের যুগে ছিল, এখনো আরব দেশে আছে। মিশরে আছে, সিরিয়ায় আছে, ইরাকে আছে, মক্কা-মদিনায় তো আছেই।
তবে আমাদের পাক-ভারত, বাংলাদেশ ছিল পিওর হানাফী। কথা কি বুঝতে পেরেছেন? যে কারণে আমরা অন্য আমল দেখলেই বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু অন্য আমল আমরা ঠেকাতে পারব না। যেমন প্যান্ট কে মেনে নিয়েছি, যেমন শার্টকে মেনে নিয়েছি(মেয়েদের), পুরুষ ছেলেদের কানের দুল মেনে নিয়েছি, হাতের বালা মেনে নিয়েছি। ঠিক তেমনি আমাদেরকে বাকিগুলো মেনে নিতে হবে। খারাপগুলো মেনে নিয়েছেন, ভালগুলো মানবেন না কেন? এগুলোও তো ইসলামে আছে, ভিন্ন ভিন্ন মাযহাবে আছে। এখন গ্লোবালাইজড হয়ে আমরা এক জায়গায় হয়ে গিয়েছি। মক্কায় যারা হজে গিয়েছেন, জোরে আমিন শুনেননি? শুনেছেন। হাত ঝোলানো দেখেননি? তো মক্কার মত ইসলাম হলে আপনাদের সমস্যা কি? আপনি যার ইচ্ছা বুকে বাঁধবে, যার ইচ্ছা নাভিতে বাঁধবে, যার ইচ্ছা ঝুলিয়ে রাখবে। সালাফে-সালেহীন থেকে সবই আছে।
এজন্য দ্বিতীয় অনুরোধ হলো ভাইয়েরা, আপনার যে তরুণ, যে যুবক, যে মানুষটা মসজিদ এসেছে, জোরে আমিন বলেছে, রফ'উল ইয়াদাইন করেছে। আপনি তার রফ'উল ইয়াদাইনটা দেখলেন, নামাজ পড়াটা দেখলেন না? কাজেই আপনার যদি আপত্তি থাকে তাহলে তাকে আদবের সাথে, সম্মানের সাথে বলবেন যে ভাই তোমার যদি জোরে আমীন বলতেই হয় তাহলে এমনভাবে বলো যাতে কারো ডিস্টার্ব না হয়। কথা কি বুঝতে পেরেছেন? ঝগড়া করবেন না।
আচ্ছা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী জোরে আমিন বললে গুনাহ হবে, আবু হানিফার লেখা বা হানাফী মাযহাবের প্রাচীন কোন বই থেকে আমাকে দেখিয়ে দিবেন, আমি আপনাকে দশহাজার টাকা দিব। কথা বুঝতে পেরেছেন? জোরে আমিন বললে গুনাহ হবে, রফ'উল ইয়াদাইন করলে গুনাহ হবে কোথাও নেই। কিন্তু যদি কেউ নামাজের ভিতরে রুকু-সিজদা ঠিক করে না দেয় গুনাহ হবে, এটা হানাফী মাযহাবের সব কিতাবেই আছে। আপনার পাশের মুসল্লী নামাজ পরে, ঠিক করে রুকু সিজদা দেয় না। আছে না? আপত্তি করেন নাকি? করেন না। কিন্তু একটা লোক রফ'উল ইয়াদাইন করলে আপত্তি করেন, এটা কি হানাফী মাযহাবের শিক্ষা নাকি? না। এটা হল মাযহাবের নামে জালিয়াতি।
এজন্য ভাইয়েরা কথা হল যারা সহিহ হাদিস পালন করতে চান, সহিহ হাদীসকে সহিহভাবে ভালোভাবে পালন করেন। রফ'উল ইয়াদাইন সহিহ হাদিসে আছে। কিন্তু রফ'উল ইয়াদাইন নিয়ে ঝগড়া করা অথবা রফ'উল ইয়াদাইন না করলে নামাজ হবে না এসব কথা সহিহ হাদীসে নেই। এটা আমাদের বানানো কথা।
যারা মাযহাব মানতে চান, আলহামদুলিল্লাহ। মাযহাব দ্বীন মানার, সুন্নাত মানার অত্যন্ত সহীহ পদ্ধতি। মাযহাব মানে দ্বীন না, দ্বীন পালনের জন্য আলেম-উলামারা ইজতেহাদ করে পদ্ধতি বলেছেন, আমরা তাদের সহায়তা গ্রহণ করি। আপনার মাযহাবে কোথাও নেই যে অন্য মাযহাব পালন করলে তাকে গালি দিতে হবে। কাজেই আপনি এটা করিয়েন না, এটা মাযহাব নয়।
এক সময় আপনারা আমার কথা মানবেন। এই মারামারি এখন হচ্ছে। আলমডাঙ্গায় জোরে আমিন আস্তে আমিন নিয়ে মারামারি হয়ে একজন খুনও হয়েছে। আপনারাও খুন হবেন। এরপরে একসময় সচেতন হবেন। ঠেকাতে পারবেন না। কারণ গ্লোবালাইজেশনের কারণে যেমন প্যান্ট ঠেকাতে পারেননি, হাফপ্যান্ট ঠেকাতে পারেননি, জিন্স ঠেকাতে পারেননি, এটাও ঠেকাতে পারবেন না। তবে আপনারা মারামারি করবেন, বাংলাদেশের মোর দেন ফিফটি পার্সেন্ট মুসলমান খ্রিস্টান হয়ে যাবে, তারপরে হঠাৎ খেয়াল হবে নাইজেরিয়ার মত যে কোথায় আছি।
আমার অনুরোধ হলো, এই পর্যায়ে যাওয়ার আগেই সচেতন হোন, ঝগড়া করিয়েন না। এইসব মাসআলা ঝগড়ার মাসআলা না, ব্যক্তিগত পালনের মাসআলা। আল্লাহ তা'আলা তাওফিক দান করুন। আমিন।
মাযহাব বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে
ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিমাহুল্লাহ)
শ্রুতিলিখন: মিরাজ শাহরিয়ার