আমি ৪০ বছর ধরে দেখে শুনেও "সুন্নি" দের যে ব্যপারগুলো বুঝতে পারছিলাম না -- ফারাজি সাহেব এক স্টেটাসেই সেটা ক্লিয়ার করে দিলেন।
কপি পেষ্ট -- লুৎফুর ফারাজি সাহেবের সর্বশেষ স্টেটাস
///////
প্রসঙ্গ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ও রেজাখানী মতভেদ! অতিব খুশি নয় বাস্তবতা বুঝুন!
মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব এখন হক পথে ফিরে আসছেন। তিনি মাজারপূজারীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তিনি হাজির নাজিরের মাসআলায় আহলে হকের আকীদার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন।
এসব বিষয়ে দেখে আমাদের অনেক সেলিব্রেটি উলামাগণকেও খুশিতে গদগদ হয়ে স্ট্যাটাস প্রসব এবং আব্বাসীর গুণগান গাইতে দেখে অবাক হলাম।
আফসোসটা এ জায়গায় যে, আমরা কার সাথে কী নিয়ে মতভেদ? তা পরিস্কার না জেনেই বিরোধিতা যেমন করি। তেমনি এক দু'টি ভালো কথা শুনেই তার প্রচারণায় নেমে যাই।
বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানে প্রচলিত মীলাদ কিয়ামপন্থী দলের মাঝে দু'টি ধারা হল প্রসিদ্ধ। একটি হল, আহমদ রেজা খান বেরেলবী অনুসারী গ্রুপ।
আরেকটি হল, সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ এর সিলসিলার মৌলিকত্ব থেকে ছিটকে পড়া দল।
দ্বিতীয় দলটি তথা সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ এর আদর্শ থেকে খানিক সরে যাওয়া দলটি বাংলাদেশে ছারছিনা, ফুরফুরা, ফুলতলী এবং জৌনপুরী ছিলছিলা নামে প্রসিদ্ধ।
এ ৪ চার দলের সাথে উলামায়ে দেওবন্দের মৌলিক মতভেদ শুধু প্রচলিত মীলাদ কিয়াম নিয়ে। এছাড়া বাকি মাসআলায় তারা আমাদের অনেক কাছের।
তাদের মতে হাজির নাজির, মুখতারে কুল, হুলুল ও ইত্তিহাদ ইত্যাদি আকীদা যে অর্থে রেজাখানীরা বলে থাকে তা শিরকী আকীদা।
উক্ত সিলসিলা চতুষ্টয়ের আকাবিরদের লেখা গ্রন্থগুলো যার প্রকিষ্ঠ প্রমাণ।
যদিও এ সিলসিলাগুলোর বেশ কিছু বক্তা ও লেখকের বক্তব্যে ভিন্নতা ও উগ্রতা পাওয়া যায়। যা রেজাখানীদের উগ্রতার সাথে মিলে যায়।
এসব কারণে তাদের সাথে আমাদের বিরোধ।
কিন্তু আসল ব্যাপার হল, তাদের সাথে আমাদের মিলগুলো সবচে' বেশি।
কিন্তু রেজাখানীরা বেশিরভাগই মুশরিক প্রকৃতির। তাদের আকীদায় ভয়াবহ সব শিরকী আকীদা রয়েছে। যেমন নবীকে সর্বত্র হাজির নাজির মনে করা। নবীজীকে আল্লাহর জাতী নূরের তৈরী মনে করা, নবীজীকে মুখতারে কুল তথা নিজস্ব ক্ষমতায় সব কিছু করতে সক্ষম মনে করা, হুলুল ও ইত্তিহাদের আকীদা পোষণ করা ইত্যাদি।
এ দুই দলের পরস্পরের মিল হল, মীলাদ কিয়ামে। কিন্তু আকীদাগতভাবে তাদের উভয়গ্রুপ তথা সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ এর মূল আদর্শ থেকে ছিটকে পড়া দল এবং রেজাখানী দলের মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
আরো মজার বিষয় হল, এ দুই দলের মাঝে মীলাদ কিয়ামের মিল হলেও বড় পার্থক্য হল, রেজাখানীদের মতে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ হলেন গুস্তাখে রাসূল এবং কাফের। [নাউজুবিল্লাহ]। দেখুন আহমাদ রেজা খানের লিখিত হুসামুল হারামাইন।
আর অপরদিকে ফুরফুরা, ছারছিনা, ফুলতলী এবং জৌনপুরীদের মতে তিনি সবচে' বড় আশেকে রাসূল।
কারণ, তার উপরই তাদের সিলসিলার মূল ভিত্তি।
প্রসঙ্গ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী!
রেজাখানী আকীদায় বিশ্বাসী আলাউদ্দীন জিহাদী যখন গ্রেফতার হয়। এর আগ থেকেই সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ প্রসঙ্গে মীলাদপন্থী দুই দলের মাঝে বিরোধ শুরু হয়। কথা কাটাকাটি, মাহফিলে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এমন কি বাহাসের চ্যালেঞ্জবাজীও চলে।
এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব কট্টরপন্থী মীলাদ কিয়ামপন্থী। কিন্তু যেহেতু তার জৌনপুরী সিলসিলাটা সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ এর মাধ্যমে পাওয়া। আর রেজাখানী বিদআতিদের মতে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ হলেন কাফের।
আব্বাসী সাহেবের বোকা রেজাখানীদের সাথে যে সখ্যতা তৈরী হয়েছিল সেটির উপর থেকে পর্দা উঠে যায়।
এ কারণে তাদের বিরোধটা প্রকাশ্য এবং ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে।
আব্বাসী সাহেব কিছুতেই কট্টর রেজাখানী আলাউদ্দীনের পক্ষে বক্তব্য দিতে পারেনি। ফুলতলী এবং ছারছিনা ও ফুরফুরাপন্থী কাউকে তার মুক্তিতে কথা বলতে দেখা যায়নি।
অপরদিকে আলাউদ্দীন জিহাদীকে পূঁজি করে সব রেজাখানীরা এক জোট হয়ে যায়।
ফলে আব্বাসীর মুখোশটা পুরোপুরি উন্মোচিত হয়ে পড়ে।
এখন সে যা বলছে তার পুরোটাই একটি ধাপ্পাবাজী। এসব করছে এখন তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য। যা বলছে তা তাদের আগেরই আকীদা। কিন্তু এতোদিন প্রকাশ্যে বলেনি, কারণ রেজাখানীদের কাছ থেকে হাদিয়া তোহফা ও সুবিধা নেবার দরকার ছিল।
সুতরাং আমাদের বুঝে শুনে কথা বলা উচিত। দু' একটি ভালো কথা শুনেই গদগদ হওয়া উচিত নয়।
আমি আবারো বলছি যে, দুই মীলাদী গ্রুপের মাঝে আমাদের অধিক কাছের হলো, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ছারছিনা এবং ফুলতলীরা। তাই তাদের সাথে রেজাখানীদের গুলিয়ে ফেলা যাবে না।
যার সাথে যতটুকু পার্থক্য ততটুকুই বলা উচিত। অতিরঞ্জন করা উচিত নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ আকীদা বিশ্বাসের উপর অটল অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
///// শেষ
এই ভাবে জিনিসগুলো ক্লিয়ারলি ব্যখ্যা করলেই আমাকে আর ১০ বছর ধরে এত স্টেটাস দিয়ে এত লেকচার শুনে "আসলে ঘটনা কি" বুঝার চেষ্টা করতে হতো না।
শিক্ষা : কোনটা "হক" সেটার উপর সারাদিন দলিল প্রমান দিয়ে লেকচার দিলেও আমি কিছু বুঝতে পারবো না। বরং আগে দলগুলো ভাগ করুন। উৎস বিশ্বাস বর্ননা করুন। এর পর মূল পার্থক্য কি ও কেন সেটা সহজ করে সংক্ষেপে বলুন। এখন আলহামদুলিল্লাহ যা দরকার সেটা বুঝবো। :-)
জাজাকাল্লাহ।