Post# 1587639736

23-Apr-2020 5:02 pm


ইবনুল জাওযী রহি: এর নিজের জীবনের কথা। নিচেরটা থেকে কে কি বুঝবেন সেটা তার ব্যপার। তবে আমি বিভিন্ন জিনিস দেখাতে পারি। দেখাবো না ইনশাল্লাহ। তবে অন্য কেউ এসে দেখাতে থাকলে নিজের রেফারেন্স হিসাবে রেখে দিলেম। তর্কের জন্য কখনো যেন ব্যবহার না করতে হয়। আমার পথ আমার দায়।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের পথ দেখান।
জাজাকাল্লাহ।

(collected)
"জীবনের শুরুতেই আমার ভিতর যুহদ (দুনিয়া বিরাগ)এখতিয়ার করার একটা প্রেরণা ও অভ্যন্তরীণ দাবি ক্রিয়াশীল ছিল।সিয়াম পালন ও নফল আমল খুব যত্ন ও আন্তরিকতার সঙ্গেই করতাম।নিঃসঙ্গ ও একাকী থাকাই আমার বেশি পছন্দ ছিল।তখন আমার অন্তরের অবস্থা ছিল খুব ভাল।আমি উজ্জ্বল দূরদৃষ্টি ও তীব্র অনুভূতির অধিকারী ছিলাম।দৈনন্দিন জীবনের কোন মুহূর্ত আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে অতিবাহিত হলে সেজন্য আফসোস হত।আল্লাহর সঙ্গে মিষ্টতার সম্পর্ক এবং দোয়ার মধ্যে মিষ্টতা ও স্বাদ অনুভূত হত।

এরপর আমার মনে হল,কতক শাসক ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ব্যক্তি আমার ওয়াজ ও বক্তৃতা-মাধুর্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এবং তারা আমাকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করছেন আর আমার প্রকৃতিও সেদিকে ঝুঁকে গেছে।ফল দাড়ালো এই,দোয়া ও মোনাজাতে এককালে যে স্বাদ পেতাম তা আমার থেকে বিদায় নিতে থাকল।এরপর অপরাপর শাসকও আমাকে তাদের দিকে টানতে থাকে। আমি (সন্দেহযুক্ত জিনিসের ভয়ে) তাদের ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব এবং তাদের খানাপিনা থেকে গাঁ বাঁচিয়ে চলতাম।

আমার অবস্থা তখনও মন্দ কিছু ছিলনা।এরপর ক্রমান্বয়ে আমার ভিতর তাবিল(ভিন্ন অর্থ ও ভিন্ন ব্যাখ্যা)-র দ্বার উম্মুক্ত হতে লাগল।আমি মুবাহ বস্তুর ক্ষেত্রভূমিতে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে শুরু করলাম।তখন আমার থেকে সেসব বিশেষ অবস্থা বিদায় নিতে থাকল।যতই আমি ওইসব শাসকের সঙ্গে মিশতাম এবং ওঠাবসা করতাম,আমার আত্মার অন্ধকার ততই বৃদ্ধি পেত,এমনকি আমি অনুভব করলাম,আমার সেই আলো নিভে গেছে এবং আত্মা অন্ধকারে ডুবে গেছে।এ রকম পতিত হওয়ায় আমার আমার স্বভাব ও প্রকৃতির মাঝে একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হল এবং এই অস্থিরতার প্রভাব ওয়াজ-মাহফিলের শ্রোতামন্ডলির উপর এমনভাবে পড়ল যে,তারা অস্থির হতে উঠত।এই অস্থিরতার কারণে তাদের বেশিরভাগ লোকের তাওবা করার ও সংশোধিত হওয়ার তাওফিক জুটত।কিন্তু আমি যেই খালিহাত ছিলাম,সেই খালিহাতই থেকে যেতাম।

নিজের এই দারিদ্র ও দূর্ভাগ্য দেখে আমার অস্থিরতা আরও বেড়ে গেল কিন্তু চিকিৎসার কোন ব্যবস্থাই চোখে পড়ল না।এরপর আমি সালেহীন বা আল্লাহর সৎবান্দাদের কবর যিয়ারত শুরু করি এবং আল্লাহর নিকট আমার নিজের অন্তরাত্মা সংশোধনের জন্য দোয়া কিরতে থাকি।শেষ পর্যন্ত আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি আমাকে সহায়তা করল এবং আমাকে আস্তে আস্তে নির্জনতার দিকে টেনে নিল।সেই অন্তর,যা আমার আয়ত্তের ভাইরে চলে গিয়েছিল,তা পুনরায় আমার আয়ত্তে ফিরে এল।যে অবস্থা আমার খুব ভাল মনে হত,তার দোষ-ত্রুটি আমার সামনে প্রকাশ পেল।আমি আলস্যের সেই নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলাম এবং আমার মেহেরবান প্রভুর হৃদয়খোলা শুকরিয়া আদায় করলাম।"

-আল্লামা ইবনুল জাওযী রহি:,সাইদুল খাতির;১:১২১-১২২

23-Apr-2020 5:02 pm

Published
23-Apr-2020