Post# 1585645828

31-Mar-2020 3:10 pm


Lesson : মৃত্যু কষ্টকর। দেখা কষ্টকর। মানুষ দেখতে চায় না। চায় দ্রুত রোগিকে হাসপাতালে পাঠাতে। কিছু একটা করতে। নয়তো আত্মিয়রা কি বলবে? পরিচিতরা এসে চিল্লা চিল্লি করবে "কিছু করছেন না?" "আপনাদের ক্ষমতা নেই।" "লাইন নেই?" "আমার তো দুলাভাই আছে।" এগুলো শুনে ডিপ্রেসড হয়ে পড়ি।

কিন্তু এখন : বড় বাড়ি হোক বা ছোট বাড়ি। কষ্টকর মৃত্যু দেখার জন্য তৈরি থাকতে হবে। রোগিকে বাসায় মরতে দিন। এম্বুলেন্সে এম্বুলেন্সে সারা দিন রাস্তায় ঘুরিয়ে ঝাকিয়ে না। যেন মানুষকে বুঝাতে পারি "কিছু একটা করছি।"

________
(the following is copy pasted)

তারেক রিপনের দুলাভাই চাটখিল কলেজে সাবেক জি এস জাহাঙ্গীর আলমের জ্বশ্বাগকা রোগে মৃত্যুর গল্পটি শুনুন।

আমার বোন জামাই, আমার দুলাভাই। তিনি ব্যবসা করতেন চাঁদপুরে। ১০ দিন আগে উনার জ্বর এবং সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

লোকাল ডাক্তার উনাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বল্লো এবং সে দিনই তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হলো। কিন্ত লোকাল ডাক্তার কোনো রোগের কথা বলেননি।

পারিবারিকভাবে আমরা সচেতন বলে প্রথমেই উনাকে নিয়ে গেলাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। রাত তখন ৮টা। সেখানকার ডাক্তার উনার ফাইল দেখতে চাইলেন এবং তাদেরকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন।

২ ঘন্টা পর ডিউটি অফিসার ফিরে এসে জানালে আমরা এ রোগী এখানে রাখতে পারবো না কারন উনার নিউমনিয়া লক্ষন।

বললেন বক্ষব্যধি হাসপাতালে নিয়ে যান। কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাদেরকে বের করে দেয়া হলো। দুলাভাই তখনো খুব শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

তারপর সেখান থেকে তাকে বক্ষব্যধিতে নেয়া হল কিন্ত করোনা রোগী বলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলো না, বল্লো এধরনের রোগী তারা নিচ্ছেনা।

সেখান থেকে নেয়া হলো ইবনে সিনা হাসপাতালে। তারা কোনো কথাই শুনলেন না।

সেখান থেকে তাকে নেয়া হলো রেনেসাঁ নামে একটি ক্লিনিকে। সেখানও তারা গ্রহণ করলেন না। শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট শুনেই সবাই অপারগতার কথা বলে অনেকটা বের করে দিচ্ছে। রাত তখন ৪টা।

সবাই হতাশ হয়ে উনাকে বাসায় নিয়ে গেলো। কোনো রকম রাত কাটানোর পর বাসায় একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার আর নেভ্যুলাইজারের ব্যবস্থা করা হলো। শ্বাসকষ্ট ব্যাপারটা কতোটা জটিল সেটা না বুজলেও মোটমুটি সবাই কিন্তু কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারেন।

যাই হোক ঘন্টা তিনেক পর দুপুর ১টার দিকে একটা এম্বুলেন্সে কল করে উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো ইউনাটেড হাসপাতালে। আমরা মূলত নিউমোনিয়া গোপন করে হার্টের সমস্যা বলে Appointment নিয়েছিলাম। না হলে হয়তো সেখানেও ডুকতে পারতাম না।

তার পর ডাক্তার উনার ফাইল দেখে বুজতে পারলেন এবং করোনা ভাইরাস ধারনা করলেন। বল্লেন করোনা রিলেটেড হাসপাতালে চলে যেতে।

ফলে সেখান থেকে বের হয়েই উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে।

উনাকে রাখা হলো ২দিন। ৪৮ঘন্টা পর উনার রিপোর্ট আসলো নেগেটিভ, মানে তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত নন। তাকে রিলিজ দেয়া হলো।

এ অবস্থা আমাদের যার যার অবস্থান থাকে সকল ধরনের কার্ডিয়াক এবং নিউমোনিয়া রিলেটড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক আবেদন করেও আমরা কারো মন গলাতে পারিনি। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল থেকে আবারো নিয়ে যাওয়া হলো বাসায়।

বিগত ৫ দিন তিনি কিন্ত বিন্দুমাত্র ঘুমাতে পারেনি। ইতিমধ্যে উনার হাত পা ফুলে গেছে, ডায়বেটিস চরম হাই, ফুসফুসে পানি জমে গেছে। ৭ দিনের মাথায় অনেককে দিয়ে তদবির করে ভর্তি করানে হলো হার্ট ইন্সটিটিউটটে।

সেখানে নেই কোনো ডাক্তার। চরম আবহেল। যেখানে উনার দরকার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা, অক্সিজেন সেখানে চরম ডিলেডালা অবস্থা। নেই কোনো ডাক্তার। সবাই নাকি ছুটিতে। ২ দিন থাকার পর হঠাৎ ডাক্তার বল্লো আপনারা রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে যান। এ চিকিৎসায় সময় লাগবে। তারচেয়ে বাসায় থাকা ভালো। আমরা অনেক বলে কয়েও আর হাসপাতালে থাকার অনুমতি পেলাম না। না জানলাম উনার কি সমস্যা না জানলাম উনার চিকিৎসা পদ্ধতি।

বাসায় নিয়ে আসা হলো নবম দিনের মাথায়। একিদিন রাত ২ টায় চরম শ্বাস কষ্টশুরু হলে দুলাভাইয়ের। আবারও ব্যর্থ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে এম্বুলেন্স কল করে হার্ট ইন্সটিটিউটের দিকে রওনা হলাম।

সেখানে পৌঁছে জানলাম তিনি আর নেই। সবাইকে সকল ধরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার আর কোন শ্বাসকষ্টও হচ্ছে না। তিনি মারা গেছেন। হা, ফাইনালি তিনি মারা গেছেন। এজন্য ফাইনালি বল্লাম কারন গত ১০দিন মানুসিকভাবে তিনি প্রতিদিনই মারা গেছেন।

একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুনতো আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন বা সন্তান কেউ অসুস্থ আর আপনারা তাকে সাথে নিয়ে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল দৌড়ে বেড়াচ্ছেন অথচ কেউ আপনাদের ভর্তি করাচ্ছে না। তাহলে ঐ অসুস্থ মানুষটি কি জীবিত অবস্থায় মরে যাননি?

আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো। যেকোনো হাসপাতাল আমরা Effort করতে পারতাম।

কোনো হাসপাতালের বারান্দাতেইতো আমরা পৌঁছাতে পারলাম না। বলতে পারেন বিনা চিকিৎসায় একজন লোক মারা গেলো। আমার দুলাভাই এর যদি বিন্দু মাত্র চিকিৎসার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারতাম তিনি মারা যেতেন না।

    Comments:
  • https://www.facebook.com/tareq.ripon/posts/10218834814393948

31-Mar-2020 3:10 pm

Published
31-Mar-2020