৪৪৯ হিজরি (1057 খ্রিস্টাব্দ), জুমাদাল উখরা।
বুখারা শহরে দেখা দেয় মহামারি। বুখারা তখন খোরাসানের তীর্থস্থান ছিল। যা বর্তমানে উজবেকিস্তানে অবস্থিত। মহামারির প্রকোপ দেখা দিতেই একদিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ বুখারা ছেড়ে পালায় জীবন-বাঁচানোর তাগিদে। মারা যায় এক কোটি লোক!
মহামারি সংক্রমিত হতে থাকে। একসময় আজারবাইজান, ইরান, ইরাক ও বসরায় ছড়িয়ে পড়ে। এতবেশি লোক মারা যায় যে, একটি করে লাশ দাফন করা সম্ভব ছিল না। গণকবর দিতে হতো। লোকেরা গর্ত খুঁড়ে, তাতে ২০-৩০ টি লাশ একসাথে দাফন করত। এমন কী একই কাফনে একসাথে কয়েকটি লাশ মুড়িয়ে দাফন করত।
একসময় এই মহামারি এসে ছড়ায় সমরকন্দ ও বলখ শহরে। প্রতিদিন ছয়হাজার বা তারচেয়ে বেশি লোক মারা যেত। জীবিত লোকেরা টানা দিনরাত লাশ দাফন করেও শেষ করতে পারত না।
বুখারা থেকে একদল লোক পালায় বলখের দিকে। পথিমধ্যে তারা রাবাত নামক জায়গায় যাত্রাবিরতি করে। ব্যস, এখানে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এখানকার সব লোক মরে সাফ হয়ে যায়।
সমরকন্দে শাওয়াল থেকে জিলকদ পঞ্চাশ দিনে প্রায় দুইলাখ ছত্রিশ হাজার লোক মারা যায়! এদের বেশিরভাগই ছিল নারী, শিশু ও যুবক। একজন শিক্ষকের কাছে নয়শো শিশু পড়ালেখা করত। মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে সকলেই মারা যায়!
এই মহামারিতে আক্রান্ত লোকের অবস্থা ছিল করুণ। আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদপিণ্ড থেকে রক্তক্ষরণ হতো। রক্ত গলগল করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ত। আর তখনই লোকটা জমিনে লুটিয়ে পড়ে মারা যেত। এমন কী কোনো কোনো সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ দিয়ে কীট বেরিয়ে আসত। সাথে সাথে মারা যেত।
বুখারা শহরের প্রায় দুই হাজার বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একজন লোকও ঘরে থাকেনি; বের হয়ে মসজিদে চলে আসে। এসে তাওবা, নামাজ, ইবাদত, বন্দেগি, তিলাওয়াত আর কান্নাকাটি করতে থাকে। নফল রোজা রাখতে শুরু করে। সাদাকাহ-খায়রাত দিতে থাকে। নিজ নিজ ঘরের মদের মটকাগুলো ভাঙতে লাগে। গান-বাজনা ও সব ধরনের বিনোদনের মাধ্যম নষ্ট করে দিতে শুরু করে।
একটি ঘরের অবস্থা ছিল ভিন্ন। সেই ঘরে মদের মটকা পাওয়া যায়। এতে হয় কি, একরাতেই পুরো ঘরের লোক মরে সাফ হয়ে যায়! আরেকটি ঘরে একজন লোক ব্যভিচারিণী নারীকে নিয়ে রাতযাপন করে। ফলে, সে রাতেই দুজন মারা যায়! অন্য আরেকটি ঘরে কিছু লোক প্রবেশ করে। তারা দেখতে পায়, ঘরের বাসিন্দার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কোনরকম সে একটি মদের মটকার দিকে ইঙ্গিত করে। মটকাটি ভেঙে ফেলা হয়। সাথে সাথে লোকটি সুস্থ হয়ে ওঠে।
সোর্স : বাজলুল মাউন ফি ফাজলিত তাউন : ৩৬৬, ইমাম শিহাবুদ্দিন আহমাদ ইবনে হাজার আসকালানি।
অনুবাদ : আইনুল হক কাসেমী।