Post# 1579514010

20-Jan-2020 3:53 pm


হানাফি মাজহাবে থেকে আকিদা নিয়ে যারা কনফিউশনে আছেন তাদের জন্য :


মূল কথা :
সরাসরি কোরআন শরিফ হলো আমাদের আকিদার কিতাব।
কোনো তফসির ছাড়া, কোনো ব্যখ্যা ছাড়া।


দুটো জিনিস শিখেছি :
প্রথমতঃ হানাফিতে আকিদার ক্ষেত্রে "তকলিদ" নেই। তকলিদ মানে কোনো আলেমের অন্ধ অনুসরন। শরিয়তের ক্ষেত্রে আমরা যেমন করি। "ওমুক মুফতি বলেছেন তাই এটাই ঠিক, অন্যগুলো ভুল। কারন আমি উনার ফতোয়া অনুসরন করি।"

আকিদার ক্ষেত্রে এরকম করা যাবে না। "কেউ যদি বলে আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, কারন ওমুক আলেম বলেছেন আল্লাহ আছেন তাই -- তবে কি তার ঈমান থাকবে?" -- এটা কমন উক্তি হানাফি আলেমদের।

এটা দিয়ে আমি বুঝি সরাসরি কোরআন হাদিস থেকে আকিদা শিখতে হবে।

এর পর কথা আসে "তবে এগুলোর ব্যখ্যা কে করবে? ব্যাখ্যার জন্য আকিদার কিতাব পড়তে হবে। কোরআন হাদিস পড়ে আপনি সরাসরি আকিদার মতো জটিল জিনিস বুঝবেন না।"


দ্বিতীয় কথা : ব্যখ্যার কোনো জিনিস আকিদা না। সালাফি শায়েখ ইমাম হোসেন সাহেবের লেকচার আছে এর উপর। "ব্যখ্যা ব্যখ্যাই, আপনি এক রকম ব্যখ্যা করবেন, আরেকজন আরেক রকম। এটা আকিদা হয় কি করে?"

তাই ব্যখ্যার দরকার নেই। ব্যখ্যা আকিদার অংশ না। সরাসরি কোরআন শরিফ পড়ে যা বুঝবেন সেটাই আপনার আকিদা।


"কিন্তু আমি এক জিনিস বুঝবো আরেক জন আরেক জিনিস বুঝবে..."

"90s Salafi" বলে একটা টার্ম আছে নেটে। তাদেরকে এখন আর দেখা যায় না। সালাফি ধারা এখন অনেক "মডারেট" হয়েছে। ঐ সময়ে তাদের কথা ছিলো "তকলিদ হারাম, যারা তকলিদ করে তারা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরন করে না। আমাদের সরাসরি কোরআন হাদিস পড়ে ফিকাহ শিখতে হবে। আলেমরা ফিকাহর নামে বস্তা বস্তা মনগড়া কিতাব লিখেছে সব ছুড়ে ফেলে দেন।"

"মানে, কোরআন হাদিস পড়ে যে যা বুঝে সেটাই?"

হ্যা যে যা বুঝে সেটাই।

৭০ এর দিকে এক সালাফি আলেমের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলো টিভিতে,
"কিন্তু শায়েখ যে নতুন মুসলিম হলো এখনো নামাজের হাদিসগুলো পড়ে নি তবে সে তকলিদ না করে নামাজ পড়বে কি করে?"

সে নামাজের হাদিসগুলো পড়ার আগে পর্যন্ত নামাজ পড়বে না -- শায়েখের উত্তরে।

এটা এক্সট্রিম। সালাফিদের এখনও এই মত, এটা বলছি না। কিন্তু এক সময় এটাই হক ছিলো। এবং মানুষ এটাকেই স্বাভাবিক মনে করতো।

উপরের জিনিসটাকেই উল্টে দিন হানাফিদের জন্য। ফিকাহর বদলে আকিদা বসান। উপরেরটা যদি আপত্তি না থাকে তবে হানাফিদের ব্যপারেও আপত্তির কারন দেখছি না।


"হানাফিতে আকিদার তেমন কোনো কিতাব নেই।"
"হানাফি/দেওবন্দি হলো ফিকাহর পথ, আকিদার না।"
"হানাফি আলেমরা আকিদা সম্পর্কে তেমন কোনো কথা বলেন না, জানেন না।"

এর অর্থ এই না যে -- সালাফিরা আকিদা ভালো জানে তাই আকিদা শিখতে সলাফিদের কাছে যেতে হবে।

হানাফিতে এই "নাই" - টাই আকিদার অংশ। এগুলো শিখার দরকার নেই। ফিকহুল আকবর ইমাম আবু হানিফার লিখা কিনা সেটা নিয়েও তর্ক আছে। উইকিতে দেখেন।

ছোট কালে মাসলা পড়ানো হতো আমাদের অনেক, কিন্তু আকিদার কোনো কিতাব চোখে পড়ে নি।

রিসেন্টলি আসলেই হানাফিতে আম পাবলিকের জন্য কোনো পুরানো আকিদার কিতাব আছে কিনা আবার দেখতে খোজ লাগাই। পাই গাজ্জালির লিখা আকিদার কিতাবের অনুবাদ। গাজ্জালির? এটাই আমার দরকার। পড়ে দেখি বর্তমান যুগের তর্ক সেখানে। কিন্তু গাজ্জালির সময় এই তর্কগুলো কিভাবে আসলো।

এর পর আরো ভালো মতে পড়ে দেখি এই গাজ্জালি সেই গাজ্জালি না। এটা আধুনিক যুগ মিশরের এক আলেমের লিখা যার নাম গাজ্জালি। কিন্তু বইয়ের কভার দেখে প্রথমে বুঝার উপায় নেই।


এখন আকিদা যদি আমি এর পরও বই পড়ে শিখতে চাই?

করতে পারেন। এর পর যে পড়বে সে দলিল হয়তো দেবে "ডঃ বেলাল ফিলিপসের আকিদার বইয়ের চার নম্বর পয়েন্টে আছে যে এটা এটা আকিদা, যার অর্থ ___"

এখানে উনার বই মুখস্ত। আকিদার হেন্ডবুক হিসাবে ব্যবহার করছে। বার বার পড়ছে। এর উপর ব্যখ্যা করছে। ভালো।

কিন্তু উনার মতো না করে আপনি বরং কোরআন শরিফ মুখস্ত করেন। এটাকে আকিদার হ্যান্ড বুক বানান।

কোরআন শরিফ শিখলে আপনার,
আকিদার বই পড়া হবে।
আকিদা শিক্ষা করা হবে।
কোরআন পড়ার সোয়াব হবে।
হকের গাইড পাবেন।

যদি কোরআন পড়ার সময় না থাকে। ব্যস্ত মানুষ। সামারি চান, সারসংক্ষেপ, তবে আকিদার বই পড়েন। বিকল্প হিসাবে।


"আকিদার কোনো বই আপনি পড়েছেন?"
পড়েছি কোরআন শরিফ।

"কি পড়েছেন? কোরআন শরিফে তো কোনো ব্যখ্যা নেই।"
ব্যখ্যা আকিদার অংশ না।

"পড়েছেন ভালো কথা, সংগে আকিদার ঐ বইটাও পড়েন...."
আকিদার ক্ষেত্রে তকলিদ নেই।

"তবে কোরআন শরিফ পড়ে কি শিখেছেন? আপনি তো কিছুই শিখতে পারেন নি।"

শিখেছি আল্লাহ আছেন, ফিরিস্তা আছেন, উনার রাসুল আছেন, উনারা সত্য কথা বলেছেন, উনার কিতাব আছে, এতে আমি বিশ্বাস করি, আখিরাত আছে এর জন্য অপেক্ষা করি, ভালো মন্দ সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়, মৃতুর পরে আবার মানুষ জেগে উঠবে এক দিন।

এগুলোই আকিদা। এর উপর আপনার অতিরিক্ত ব্যখ্যা আপনার ব্যখ্যা। আকিদার অংশ না।


এর পর যদি চিন্তা করতে চান তবে হানাফি আলেমদের উপদেশ হলো "তাফাক্কারু ফি খালকিল্লাহ, ওয়ালা তাতাফাক্কারু ফিল্লাহ" হাদিস। অর্থ আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করো, উনাকে নিয়ে না। উনার ফিজিকেল প্রোপার্টি নিয়ে না।

তাসাউফ ধারায় হলে, আকিদার থেকে বেশি গুরুত্ব দিন আল্লাহর নৈকট্য খুজতে। যেন আমি আল্লাহকে দেখছি। যেভাবে নামাজ পড়ার কথা বলা আছে। হাদিসে জিব্রিলে। কিভাবে দেখেছেন, কি সূরতে দেখেছেন, কোথায় দেখেছেন এগুলো আপনার অন্তরের ব্যপার। সূরত বুঝারও দরকার নেই, প্রকাশ করার দরকার নেই, আলোচনা করারও দরকার নেই, এর সহি খুজারও দরকার নেই। "যেন"।

দেওবন্দি হলে ফোকাস দিন ঈমান বাড়াতে, মজবুত করতে। বিশ্বাস এত দৃড় যে কোনো কিছু টলাতে পারে না। কোনো কিছু সন্দেহে ফেলতে পারে না। আখিরাত না দেখেই, যেন আমি দেখেছি। এগুলোতে গুরত্ব।

আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের কবুল করেন।

১০
উপরের পোষ্টটা সালাফিদের জন্য না। তাদের ফিকাহ আলাদা। নিজ নিজ আলেমদের থেকে জেনে নিবেন। সেখানে আমাদের ফিকাহর মতো করে তাদের আকিদা আলাদা করে শিখতে হয়।

আলেমদের জন্য এই পোষ্ট না। আম পাবলিকদের জন্য। আলেমরা পড়বেন তাদের সিলেবাসে যা আছে। এটা উনারা জানেন।

জাজাকাল্লাহ।

20-Jan-2020 3:53 pm

Published
20-Jan-2020