Post# 1577885048

1-Jan-2020 7:24 pm


তসলিমা আপু লিখেছেন কয়েকদিন আগে :

যে বাড়িতে আমি বড় হয়েছি, সে বাড়ি ছিল প্রচণ্ড ধর্মনিরপেক্ষ বাড়ি। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের বাড়ি। আমার বাবা ছিল ডাক্তার, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক। মিটফোর্ড এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেরও অধ্যাপক । আমরা চার ভাই বোন ছিলাম বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রী। পড়েছি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান। আমি ডাক্তার হয়েছি। বাবা নাস্তিক ছিলেন। ভাই বোনেরাও নাস্তিক ছিল। দাদারা বেহালা বাজাতো, গিটার বাজাতো। আমিও গিটার। বোন হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতো। আমাদের গিটার, বেহালা আর গানের শিক্ষক ছিলেন যামিনী পাল, সমীর চন্দ্র দে, বাদল দে। দাদারা পাড়ার হিন্দু মেয়েদের সংগে প্রেম করতো। একজন তো এক হিন্দু মেয়েকে পরে বিয়েই করেছে। মেয়েটি নৃত্যশিল্পী। বোনেরও ছিল পাড়ার হিন্দু ছেলেমেয়েদের সংগে বন্ধুত্ব। আমাদের বাড়িতে মা ছাড়া কেউ নামাজ পড়তো না। মা'র নামাজ নিয়ে বাবা আর আমরা ভাই বোনেরা হাসি ঠাট্টা করতাম। বাবা জানতোই না নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। কোরান পড়তেও জানতো না। আমার বাবা দাদারা বরাবরই ক্লিন শেভড। বরাবরই স্যুট টাই। আমরা বোনেরাও আধুনিক পোশাক। জিন্স। শাড়ি টিপ।

এই ছিল আমাদের ৭০, ৮০ আর ৯০ দশকের অবকাশ। বাড়িতে সারা বছর রবীন্দ্রসংগীত বাজতো, গণসংগীত বাজতো, হেমন্ত মান্না দে সতীনাথ বাজতো। নাটক হতো, নৃত্য নাট্য হতো। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতো দাদা। আমিও করতাম । বাড়ির বুকশেল্ফে ছিল প্রচুর গল্প উপন্যাস প্রবন্ধের বই। বাড়িটিতে সাহিত্য চর্চা চলতো প্রতিদিন। দাদা লিখতো কবিতা। আমিও লিখতাম। বাড়িতেই সকাল কবিতা পরিষদ গড়ে তুলেছিলাম, বারান্দার ঘরে শহরের উৎসাহী আবৃত্তিকারদের নিয়ে বৃন্দ আবৃত্তির মহড়া চলতো। বাড়িতে দাবা খেলা চলতো বাবা আর মেয়েতে, ভাই বোনে চলতো রাত জেগে তাস খেলা। সে বাড়ির নাম ছিল 'অবকাশ'। নামখানা বাবার দেওয়া। অবকাশে আমরা সবাই ছিলাম কর্মমুখর। কারও একফোঁটা অবকাশ ছিল না।

আমাদের সেই অবকাশ আর আমাদের নেই। সেই অবকাশ এখন বড় দাদার স্ত্রী পুত্রদের দখলে। স্ত্রীর বাপের বাড়ির আত্মীয় আর পুত্রদের শ্বশুরবাড়ির পাঁড় ধর্মবাজদের প্রভাবে আমাদের সেই অবকাশ এখন কোরান হাদিস আর নামাজ রোজার অবকাশ। আমরা দেয়ালে টাঙাতাম আর্ট, সেসব সরিয়ে দেয়ালে এখন টাঙানো হয়েছে কাবা শরিফের ছবি, টাঙানো হয়েছে প্রশ্রাব পায়খানা, পেট খারাপ, বমির উদ্রেক, সর্দি কাশি আর স্বপ্নদোষের দোয়া । ময়মনসিংহ শহরে আমার বাবার ছিল ক্লিনিক। এক্স রে, প্যাথলজি, মেডিক্যাল কন্সাল্টেশান, সার্জারি, ফার্মেসি। এখন শুনেছি অবকাশের বোরখা হিজাব আর আলখাল্লা টুপি পরা লোকগুলো শহরে একটি দোকান খুলেছে, সেই দোকানে বিক্রি করে কোরান হাদিসের বই, জায়নামাজ , তসবিহ, হিজাব বোরখা, যমযমের পানি, খেজুর আর আরব দেশের আতর।

আমাদের সেই শিল্প সাহিত্যের, সেই গান বাজনার, সেই ধর্মনিরপেক্ষ অবকাশ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমাদের অবকাশই নষ্ট হয়নি। নষ্ট হয়ে গেছে গোটা বাংলাদেশ।

https://www.facebook.com/nasreen.taslima/posts/1866036306874152
____________________

যার কথা লিখেছিলেন তার দোকানের ছবি আর কাহিনি :

"" তার এ সব কথা মুলত তার আপন ভাতিজা সাফায়েত কে নিয়ে।সাফাতকে নিয়ে সে এত কিছু বললেও সাফায়েত ভাই চাচ্ছিলেন,তাসলিমা নাসরিন যে তার ফুফু-বিষয়টি গোপন থাকুক। তিনি চান না তাসলিমার ভাতিজা হিসেবে সবাই তাকে চিনুক।তিনি চান নিজের পরিচয়ে সামনে এগুতে।যে তাসলিমা সারা জীবন অবিশ্বাসের বীজ বপন করেছেন,নাস্তিকতা কে প্রমোট করেছেন সেই তাসলিমার পরিবার থেকেই একজন বিশ্বাসী আস্তিক দাঈয়ে ইলাল্লাহর আবির্ভাব হয়েছে। ইতিহাস বার বার ফিরে আসে।প্রত্যেক ফেরাউনের ঘরেই একজন মুসার জন্ম হয়। স্রোতের বিপরীতে শাফায়াত ভাই এর মাঝে পরিবর্তন কীভাবে হল?এর বাহ্যিক একটি কারনতো আছেই - বই পাঠ।যে বই পাঠ তাসলিমা নাসরিনকে অবিশ্বাসী করেছে সেই বই পাঠই শাফায়াত ভাইকে বিশ্বাসী করেছে।আমার কাছে এর আরেকটি কারন আছে, তাসলিমা নাসরিন তার পোস্টে বলেছেন, তার পরিবারের সবাই গান বাজনায় লিপ্ত থাকত এমনকি তার বাবা কোন সুরাতো দূরের কথা একটা আরবী হরফো জানতনা, সেই পরিবারে সেই বৈরি পরিবেশে একজন মানুষ নিয়মিত নামাজ পড়তেন।।তার নামাজ দেখে পরিবারের সবাই হাসা হাসি করত।এজন্য কখন নামাজ কালাম বাদ দেন নি তিনি। তিনি ছিলেন তাসলিমার মা ,শাফায়াতের দাদী। পুরো পরিবার যখন একদিকে তিনি তখন আরেক দিকে পুরো পরিবার আর নিজের সাথে যুদ্ধ করে গেছেন।তার সেই নামাজ আর মুনাজাতের ফসল আজকের অবকাশ(তাসলিমা নাসরিনদের বাসার নাম অবকাশ)। যেই অবকাশে একসময় গান, নাচের আসর হত সেই অবকাশে এখন প্রতিদিন কুরআন তেলায়াত আর রব্বে কারিমের বন্দনা হয়।

https://www.facebook.com/photo.php?fbid=2632086023703633&set=a.1772081553037422&type=3&theater

1-Jan-2020 7:24 pm

Published
1-Jan-2020