কালেকটেড।
ব্যসিক্যলি এখানে বলা হচ্ছে :
হানাফিরা অনুসরন করে : শরিয়ার ক্ষেত্রে তকলিদ, আকিদার ক্ষেত্রে না।
সালাফিরা অনুসরন করে : আকিদার ক্ষেত্রে তকলিদ, শরিয়ার ক্ষেত্রে না।
যে কারনে আমি দেখি সালাফিতে আকিদা "শিক্ষা নেয়ার" উপর প্রচন্ড গুরুত্ব দেয়া হয়। শরিয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা যে যা বুঝে।
হানাফিতে শরিয়ার শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব বেশি। আকিদায় অনেকটা যে যা বুঝে।
// the above been put boldly. not literally.
paste___
আকিদার দলিল গ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরী ....
শরীয়তের মৌলিক দলিল চারটি যথাঃ
১. কুরআন।
২. সুন্নাহ।
৩. ইজমা।
৪. কিয়াস।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত এই চার মূলনীতি অনুসরণ করে। মুসলিম উম্মাহের ইজমা যে কোন যুগেই হতে পারে। সাহাবীদের ইজমা, তাবেয়ীগণের ইজমা কিংবা পরবর্তী যুগের আলেমদের ইজমাও শরীয়তের দলিল।
এই চার মূলনীতির বাইরে শরীয়তের অন্য কোন দলিল নেই। সালাফদের ব্যক্তিগত মতামত শরীয়তের পৃথক কোন দলিল নয়। বিষয়টা এমন নয় যে, সালাফদের যে কেউ যাই বলুক, সেটাই শরীয়তের দলিল হয়ে যাবে। তবে কোন বিষয়ে সালাফদের মধ্যে যদি ইজমা হয়, তাহলে সেটা শরীয়তের দলিল হবে। নতুবা এটা সাধারণ বক্তব্য হিসেবে ধর্তব্য হবে। সালাফদের মধ্যে যারা ইজতিহাদের যোগ্য ছিলেন, তাদের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইজতিহাদ শরীয়তের দলিল বলে গণ্য হবে। মুজতাহিদের ইজতিহাদ সব যুগেই শরীয়তের দলিল। এটা শুধু সালাফদের সাথেই নির্দিষ্ট নয়। সালাফদের যুগ অবশ্যই উত্তম যুগ ছিলো। এটা রাসূল (সা.) এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। একইভাবে সালাফদের ইলম,তাকওয়া, যুহদ অবশ্যই অতুলনীয়। ইবনে রজব হাম্বলী রহ. তাদের ইলমের ফজীলতের বিষয়ে পৃথক কিতাব লিখেছেন। ফাজলু ইলমিস সালাফ আলাল খালাফ। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের সকল বক্তব্য শরীয়তের দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে না। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
কিছু ভাইয়ের মধ্যে এক ধরণের স্ববিরোধীতা দেখা যায়। বিষয়টা বেশ অবাক করার মতো। উলামায়ে কেরামের মতে তাকলীদ হয় ইজতিহাদী মাসাইলের ক্ষেত্রে। অধিকাংশ আলেমের মতে আকিদার ক্ষেত্রে তাকলিদ করার অনুমতি নেই। আমাদের এই ভাইয়েরা বিষয়টা উল্টিয়ে দিয়েছেন। তারা ইজতিহাদী মাসআলায় তাকলীদ অস্বীকার করেছেন আর আকিদার ক্ষেত্রে কিছু লোকের অন্ধ তাকলিদ করার দাওয়াত দিয়ে থাকেন। অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত হওয়া উচিৎ ছিলো। এসব ভাইদের কাছে কারও বক্তব্য দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয় না, অথচ আকিদার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা ব্যক্তির কথাকে শরীয়তের দলিল বানিয়ে দেয়। এর চেয়ে আশ্চর্য আর কী হতে পারে? অথচ আকিদার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। কোন ব্যক্তির বক্তব্য দলিল হওয়া তো দূরে থাক, বহু আলেমের মতে খবরে ওয়াহিদ বা একক রাবী বর্ণিত সহীহ হাদীসও আকিদার দলিল নয়।
আকিদার বিষয়ে কোন ব্যক্তির বক্তব্য দলিল হতে পারে না। তিনি সালাফ হোক কিংবা সালাফের পরবর্তী কেউ হোক। শরীয়তের দলিল ছাড়া অন্য কারও দলিল চাওয়ার কোন অর্থ নেই। সালাফের বুঝ কোন দলীলের সহায়ক হতে পারে, তবে সেটি শরীয়তের কোন দলিল নয়। এটা ভালো করে মনে রাখা প্রয়োজন। মাসআলা মাসাইলে মুজতাহিদ ইমামগণের ইজতিহাদ শরীয়তের দলিল। কিন্তু আকিদার মাসআলায় ইজতিহাদ যেমন অপ্রয়োজনীয়, তাদের বক্তব্যও শরীয়তের কোন দলিল হতে পারে না। এজন্য আকিদার মাসআলায় কুরআন-সুন্নাহের অকাট্য দলিল ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য চাওয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমার কথার সাথে কেউ একমত না হলে আকিদার মাসআলায় কোন ব্যক্তির বক্তব্য কতটুকু দলিলযোগ্য আগে সেটা আলোচনা করুন। আগে এটা প্রমাণ করুন যে, আকিদার মাসআলায় পূর্ববর্তীদের প্রত্যেকের বক্তব্য শরীয়তের দলিল। প্রত্যেকের বক্তব্য যদি দলিল না হয়, তাহলে কার, কোন বক্তব্য দলিল হবে সেটিও আলোচনা করুন। কারও বক্তব্য কতটুকু দলিলযোগ্য সেটা উল্লেখ না করে তার বক্তব্য বা রেফারেন্স উল্লেখ করা অর্থহীন। এজন্য যারা মুস্তাহাব প্রমাণে সাহাবী বা তাবেয়ীর কথাকে দলিল মানতে নারাজ, তারা আকিদার ক্ষেত্রে কীভাবে দলিল মনে করে সেটাই বিস্ময়।
এখানে আবেগ দিয়ে কথা বললে কাজ হবে না। আপনি আকিদার মাসআলায় ইমাম আবু হানিফা রহ. এর বক্তব্যও যদি আনেন, সেটা আমার কাছে দলিল নয়। খুব ভালো করে মনে রাখবেন। তাকলীদ বিষয়ে মুফতী তাকী উসমানী দা. বা. এর বইটা দেখুন। সেখানে কোথায় তাকলীদ হবে আর কোথায় হবে না, সেটা স্পষ্ট করা আছে। সেখানে লেখা আছে, মৌলিক আকিদার বিষয়ে কোন তাকলীদ হবে না।
যেটা শরীয়তের দলিল নয়, সেটাকে মৌলিক দলিলের স্থান দেয়া কখনও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এটি অবশ্যই অন্যায়। যারা আকিদার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী আলেম কিংবা সালাফের বক্তব্যকে শরীয়তের মৌলিক দলিলের মান দিয়ে থাকেন, তাদের একাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। শরীয়তের মৌলিক দলিলকে তার স্থানে রাখুন, আলেমদের মতামতকে স্বস্থানে রাখুন। এটাই ইনসাফের দাবী।
বিষয়টা ভালো করে বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দেই। কিছু মুহাদ্দিস ইমাম মুজাহিদ রহ. থেকে একটা ইসরাইলী রেওয়াত বর্ণনা করেছে। মাকামে মাহমুদের ব্যাখ্যা হিসেবে এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মাকামে মাহমুদ হলো, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন রাসূল স.কে তার সাথে আরশে বসাবেন।
শুধু এই ইসরাইলী রেওয়াতের উপর ভিত্তি করে বিশাল এক আকিদা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অনেকে তো রীতিমত এটার পক্ষে কিতাব লিখেছে। অনেকে বলেছে, যে বিশ্বাস করলো না যে, আল্লাহ তায়ালা আরশে রাসূল (সা.) কে তার সাথে বসাবেন, সে জাহমিয়া। অনেকে আবার বলেছে, এ ব্যাক্তি কাফের।
আল্লাহর সাথে রাসূল (সা.) আরশে বসবেন, এই ধরণের জঘন্য কথায় বিশ্বাস না করলে তাদের মতে কুফুরী হবে। চিন্তা করুন। যারা এধরণের কথা বলেছে, তারা অজুহাদ দিয়েছে আমাদের পূর্ববর্তীরা এটা বর্ণনা করেছে। এটাতে বিশ্বাস না করলেই তুমি জাহমিয়া। কী আজীব অবস্থা। অথচ উক্ত কথাটাকে শরীয়তের মানদন্ডে যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। পানি এতোদূর গড়িয়েেছে যে, এটাতে বিশ্বাস না করার কারণে ইমাম ইবনে জারীর ত্ববারী রহ. এর ঘরে পাথর মারা হয়েছে।
এভাবে বিভিন্ন ধরণের জঘন্য আকিদা সালাফের নাম ব্যবহার করে ইসলামী আকিদার অংশ বানানো হয়েছে। আর কেউ শরয়ী দলিল চাইলে তাকে জাহমিয়া, কাফের, জিন্দিক ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এজন্য আকিদার ক্ষেত্রে সব সময় আমাদেরকে মৌলিক দলিলকে সামনে রাখতে হবে।
এধরণের আরেকটি উদাহরণ দেই। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তায়ালা সীমা রয়েছে। যেমন ইবনে তাইমিয়া রহ. এই আকিদা পোষণ করতেন। এটি একটি সুস্পষ্ট ভ্রান্ত আকিদা। আল্লাহর হদ বা সীমা থাকার বিষয়টি কোন শরয়ী দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়। আর এটি হতেও পারে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রহ. এর একটি সম্ভাবনাময় বক্তব্যকে অবলম্বন বানিয়ে এটাকে ইসলামী আকিদা বানানো হয়েছে। ইবনে তাইমিয়া রহ. ও তার অনুসারীরা এখনও এই ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করে থাকে। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে তারা কিতাবও বের করেছে এই ভ্রান্ত আকিদা প্রচারের উদ্দেশ্যে।
ইবনে হিব্বান রহ. আল্লাহর জন্য সীমা থাকার আকিদাকে বাতিল মনে করতেন। আল্লাহর স্বীমা অস্বীকারের কারণে সে সময় ইবনে হিব্বান রহ. কে তার শহর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
এবার চিন্তা করুন, সালাফের অনুসরণের নামে কীভাবে ইসলামী আকিদায় বিভিন্ন ধরণের ভ্রান্ত আকিদা জায়গা করে নিয়েছে। এরকম আরও বহু আকিদা শুধু কিছু ব্যক্তির মতামতকে কেন্দ্র করে ইসলামী আকিদার অংশে পরিণত হয়েছে। অথচ এগুলোর অধিকাংশই ভ্রান্ত আকিদা।
ইমাম আওযায়ী রহ. বলেন “যে ব্যক্তি আলেমদের ‘নাদেরসমূহ’ অনুসরণ করবে সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে”। -সুনানে কুবরা বায়হাকী, ১০/২১১;সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/১২৫;তাজকিরাতুল হুফফাজ ১/১৮০।
-নাদের হচ্ছে, সকল আলেমের বিপরীতে বিরল এক মত। আজ একটি দলের অনুসরণীয় ব্যক্তিদের মাঝে বিষয়টি বেশ লক্ষনীয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এসব ভ্রান্তি থেকে হেফাজত করুন।