YouTube দেখছিলাম।
১
ডঃ জাকির নায়েক এক লেকচারে বলছিলেন বুখারি মুসলিমের ৯ টা হাদিস জোরে আমিন বলার কথা আছে।
এর পর একজন আলেমের এক ওয়াজের ভিডিও। উনি কোরআন মাথায় নিয় প্রতিবাদ করলেন "আমি কোরআন মাথায় নিয়ে কসম খাচ্ছি। যদি আমার কথা মিথ্যা হয় তবে জান্নাত যেন আমার জন্য হারাম হয়ে যায়। জাকির নায়েক যে ৯ টা হাদিসের কথা বলেছেন সেগুলোতে জোরে আমিন বলার কথা নেই।"
একেবারে চরম কসম। এরকম কসম খাওয়া থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাকে হিফাজত করুন।
এর পর বিভিন্ন জনের পক্ষে-বিপক্ষে হাজারো যু্ক্তির কাট পিস।
২
তাই নিজে খুজে দেখলাম বুখারি-মুসলিমের হাদিসে কি আছে।
لاَ تُبَادِرُوا الإِمَامَ
إِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا
وَإِذَا قَالَ وَلاَ الضَّالِّينَ . فَقُولُوا آمِينَ .
وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا
وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
ফা কুলু আমিন। আমিন বলো। "জোরে" নেই, আছে "বলো"। কিন্তু আমার বিশ্বাস, "বলো" কথার সাথে "স্বশব্দে" ইমপ্লাইড। আস্তে বা মনে মনে বলো হলে বরং "আস্তে" কথাটা থাকতে হতো।
৩
এই শেষ? না। আরো দেখার বিষয় আছে।
হাদিসের প্রথম অংশ চোখে পড়লো। আছে "ইদা কাব্বারা ফা কাব্বিরু" যখন ইমাম সাহেব তকবির বলেন তখন তোমরা তকবির বলো। কিন্তু হানাফি সালাফি উভয় পক্ষ সর্বসম্মত ভাবে আস্তে তকবির বলি। কেউ আপত্তি তুলে না। কেন?
হয়তো এখানে "কুলু" শব্দটা নেই বলে। এজন্য? একটা ব্যখ্যা হতে পারে।
এর পর শেষ অংশ চোখে পড়লো।
وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
যখন ইমাম সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে, তখন "বলো" [কুলু] আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।
এর পরও সবাই এটা আস্তে বলে। আমিনের মত স্বশব্দে বলে না। এখানে তো কুলু আছে!
৪
তবে হাদিসের বিরোধিতা কোন পক্ষ করছে?
ইমাম ফকিহদের কথা বাদ দিয়ে যে যা হাদিস থেকে বুঝে সেটা লিটারেল অনুসরন করলে প্রত্যেকের একটা কনজিসটেন্সি থাকতো। হয় কেউ সবগুলো জোরে। বা কেউ সবগুলো আস্তে বলতো। কারন "হাদিস থাকতে আলেমদের কথা কোনো দলিল না"।
সেটা হয় নি। আমরা মূলতঃ হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে নিজ নিজ আলেম-ইমামদের কথাকে অনুসরন করছি।
৫
"কিন্তু অন্য হদিসে স্পষ্টতঃই বলা আছে <এই কথা> যা থেকে বুঝা যায় <জোরে বা আস্তে> বলতে হবে।"
প্রথমতঃ এখানে ড: জাকির নায়েক এই ৯ টা হাদিসের রেফারেন্স দিয়েছেন। অন্যগুলোর দেন নি। তাই আলোচনা শুধুমাত্র এই ৯ টা হাদিস নিয়েই। শুধু এগুলো থেকে কি বুঝা যায় সেটায় কনসেনট্রেট করলে ভালো হয়।
দ্বিতীয়তঃ ভিন্ন কিতাবের অন্য হাদিস যদি রেফারেন্স হিসাবে নেই, তবে বিপরতি পক্ষের দলিলও দেখতে হবে। অন্য পক্ষেরও হয়তো অন্য হাদিস আছে যেখানে এক্সপ্লিসিটলি "আস্তে" আমিন বলার কথা আছে।
৬
মাজহাবের ইমামদের মত কি?
হানাফি-মালেকিতে আস্তে আমিন বলতে হবে।
আর হাম্বলি-শাফিতে জোরে।
আমার কাছে সবগুলোই ঠিক। সমস্যা হয় যখন উল্টো মতকে আমরা বেঠিক বলতে থাকি। "দলিল নেই।"
৭
ব্যক্তিগত ভাবে আমি আহলে হাদিস মসজিদে একেবারে আস্তে আমিন বলি।
আর রেগুলার হানাফি মসজিদে পড়ার সময় একটু শব্দ করে।
ট্রল মন আমার।
এই প্রসংগে আরো কিছু কথা ছিলো। কিন্তু এখানে কাট করলাম।
- Comments:
- ^ শুধু আমিন না, প্রথম তকবিরও মনে মনে বলে। রাববানা লাকাল হামদও মনে মনে। এগুলো সব এক ক্যটাগরিতে পড়ছে। আমিন আলদা না।
কিন্তু সত্যিকারে আস্তে কিরাতের জায়গায়ও যদি কেউ ঠোট বা জিহ্বা না নেড়ে একেবারে মনে মনে কিরাত পড়ে, তবে তার নামাজ হবে না। হানাফি মাজহাবে। সে জন্য যারা জানে, তারা কেউ এরকম করে না।
এই জিনিসটা সবার আগে ঠিক করা দরকার।
- এই গ্রুপের লোকদের আমি আল্লাহর সোপার্দ করে দিয়েছি। তাদের যুক্তি কাউন্টার করে লাভ নেই। কারন তাদের নেক আমল, আর গুনাহ থেকে বাচার চেষ্টা আপনার থেকে অনেক বেশি। এরা আপনার চৌদ্দ গুষ্টির পাপ বের করে দেখিয়ে দিতে পারবে আপনি কত নিচু। কেন আপনার কথা অনুসরনীয় না। তাদের কথা অনুসরনীয়।
সমস্যা হলো অতি সঠিক হওয়ার চেষ্টা, তাদেরকে খাওয়ারিজির দিকে নিয়ে গিয়েছে। এটা নতুন কিছু না। রাসুল্লাহ সা: এর যুগ থেকেই ছিলো।
যুক্তি দিয়ে তাদের কাউন্টার করতে পারবেন না। সাহাবায়ে কিরামগনও পারেন নি। বরং এদের থেকে দূরে থাকাটা বাঞ্চনিয়। আমি তাই করি।