One survivor's description:
অবতরণের সময় প্লেনটা একটু ঝাঁকি খেয়েছে। কেবিন ক্রুরা ল্যান্ডিংয়ের ঘোষণা ছাড়া কোনো ঘোষণা দেয়নি, কোনো সতর্ক সংকেত দেয়নি। তবে ওনারা বুঝতে পারছিলেন প্লেনটা ভালোভাবে চলছে না। প্লেন এয়ারপোর্টে আসার পর দেখছি রানওয়ে ও অন্যান্য প্লেন বাঁকা হয়ে আছে। বুঝতে পারছিলাম আমাদের প্লেনটিই বাঁকা হয়েছিল। এরপরও পাইলট প্লেনটা ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেছেন, বাঁকা থেকে সোজা করার চেষ্টা করছেন। কিছুক্ষণ পর আবার প্লেনটা কাঁপছিল, সঙ্গে সঙ্গে সামনের চার-পাঁচটা গ্লাস ভেঙে গেল, সামনের যাত্রীরা বলছিল ‘ব্ল্যাস্ট ব্ল্যাস্ট’।
তখন প্লেনটি পড়ে যায়। পড়ে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। আমার পায়ের নিচে আগুন ধরে গিয়েছিল। আমি তখন চিৎকার করে বলছিলাম, ‘আমি মরতে চাই না। আমি আগুনে পুড়ে মরতে চাই না।’ আমার স্বামী তখন কেডস পরা অবস্থায় পা দিয়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করছিলেন।
অনেক মানুষের মাথা দেখতে পাচ্ছিলাম। তারা বের হওয়ার চেষ্টা করছিল অথবা বের হতে পারছিল না। কারণ তারা শরীর নাড়াতে পারছিল না। ভাইয়া (ভাসুর) যেখানে ছিল সেখান থেকে আগুন জ্বলছিল, ধোঁয়া এসে আমার নাকে লাগছিল। মনে হচ্ছিল এ আগুনে পুড়েই তো মরে যাব। এরপর আমার মাথাটা কোনো মতে প্লেনের ভাঙা অংশ দিয়ে বের করি। আমার হাসব্যান্ড যতটুকু গিয়েছিল ততটুকু আবার ফেরত এসেছে তারপর আমার হাত ধরে টেনে বের করেছে। তা না হলে আমি বের হতে পারতাম না, কারণ আমার শরীরে কোনো শক্তি ছিল না। বের হওয়ার পর ঘাসের উপর পড়েছিলাম।
প্লেনটি ক্রাশ এবং ভেতরে ধোঁয়া সৃষ্টি হলেও কোনো অক্সিজেন মাস্ক বের হয়নি। ইমার্জেন্সি অ্যালার্মও দেয়নি। একটা প্লেনে অক্সিজেন মাস্ক থাকবে না? যখন দুর্ঘটনায় পড়বে তখন অক্সিজেন মাস্ক তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হওয়ার কথা। অক্সিজেন থাকলে অনেক মানুষ সুস্থ থাকত, অন্তত শ্বাস নিতে পারত। যদি অক্সিজেন মাস্ক থাকত তবে অনেকে সজ্ঞান থাকত এবং বের হতে পারত। মানুষ বেরই হতে পারেনি। আমি ধোঁয়া খেয়েছি, আমি বুঝতে পারছি। ধোঁয়ার কারণে মাথাটা ঘুরে উঠে, কিছু বোঝা যায় না, অজ্ঞান অজ্ঞান লাগে।
আমার পর আরও দুই-তিনজন মানুষ বের হয়েছিল। আমরা বের হওয়ার ২ মিনিটের মাথায় বড় একটা ‘ব্ল্যাস্ট’ হয়। চোখের সামনে বিধ্বস্ত প্লেনের আগুন জ্বলতে দেখছিলাম। যারা উদ্ধারের জন্য গিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিস, তাদের আমার অভিজ্ঞ মনে হলো না। তারা আগুন কন্ট্রোলে আনতে পারছিল না। তাদের কেউ ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল না। একটু ব্লাস্ট হলেই সবাই পেছনে দৌড়ে চলে যাচ্ছিল।
https://www.youtube.com/watch?v=flRI1r5PzG0