আকিদা : নিরাপদে চলা।
১
৭০ এর দশক। পাঠ্য বইয়ে একটা গল্প।
এক বুজুর্গ। ছাত্রদের পরিক্ষা নেবার জন্য সবাইকে একটা কবুতর দিয়ে বলেন এমন জায়গায় জবাই দিয়ে আনো যেন কেউ না দেখে। শুধু একজন ফিরে বলে “আমি এমন কোনো জায়গা পেলাম না যেখানে আল্লাহ দেখছেন না।”
উনি বললেন তোমার শিক্ষা পূর্ন হয়েছে।
২
ঐ সময় আল্লাহ সর্বত্র আছেন বিশ্বাস করা ছিলো উচ্চ তাকওয়ার নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র আছেন মানে মানুষ আল্লাহর ভয়ে গুনাহ করতে ভয় পাবে। কেউ যদি সেই বিশ্বাস না করে শুধু বিশ্বাস করেন আল্লাহ শুধু আকাশের উপর আছেন? তবে সে সাধারন মুসলিম।
আমি মনে মনে প্রশ্ন করতাম : তাহলে টয়লেট বা ময়লা জায়গাগুলোতে উনি নিশ্চই নেই? কচি মনের প্রশ্ন। মুখে বলার সাহস করতাম না।
৪০ বছর পর : সৌদি শায়েখদের কাছে ঐ একই প্রশ্ন শুনেছি।
৩
৮০ এর দশক। টাইম, স্পেইস, ডাইমেনশন এগুলো শিখতে লাগলাম। আল্লাহ তায়ালার ফিজিক্যল এট্রিবিউটস কি?
জানলাম এই ধরনের প্রশ্ন করা নিষেধ। এগুলো নিয়ে চিন্তা করাও নিষেধ। তাফাক্কারু ফি খালকিল্লাহ, ওয়ালা তাতাফাক্কারু ফিল্লাহ। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করো, কিন্তু উনার ফিজিক্যল এট্রিবিউটস নিয়ে চিন্তা করো না। এটা করা নিষেধ।
এটা ভালো মনে হয়েছে। নয়তো হাজারো চিন্তা-উপলব্ধি-প্রশ্ন-ধারনা মনে ভীড় করে জমতে থাকতো। যেগুলোর কোনো নিশ্চিৎ উত্তর নেই।
৪
৯০ এ। কোরআন শরিফের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে শিখে ফেলেছি। সৃষ্টির পরে আল্লাহ তায়ালা আরশে সমাসিন হয়েছেন কথাটা যেমন পেয়েছি। তেমনি দুনিয়াতে এমন তিন জন কোনো কথা আলোচনা করে না যেখানে আল্লাহ তায়ালা চতুর্থ জন হিসাবে উপস্থিত নেই। বা পাচ জন যেখানে উনি ষষ্ঠ জন না একথাও পেয়েছি। দুটোর মাঝে আমার কোনো কন্ট্রাডিকশন লাগে নি। স্বাভাবিক। পড়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছি।
৫
দেশে ইন্টারনেট আসে। সবাই ঝাপিয়ে পড়ে নেটে। আমিও। ফেসবুক আসতে আরো ১০ বছর বাকি। কিন্তু আমাদের কথা আদান প্রদানের জন্য অন্য মিডিয়াম আছে। Yahoo mailing list. ইমেইলে চলতো আলোচনা-তর্ক-প্রচার। দুনিয়ার হাজার হাজার মুসলিম এখানে ভিড় করে। কয়েকশত গ্রুপে।
এক ভাই এসে বলে “আল্লাহ সর্বত্র আছেন” এটা ঠিক না। বরং বিশ্বাস করতে হবে উনি শুধু আরশের উপর আছেন।
আরেকজন এর উপর যোগ করে বলেন "শুধু ঠিক না" তা নয়, বরং সর্বত্র বিশ্বাস করা কুফর। এখানে নিউট্রাল অবস্থান নেবার সুযোগ নেই। জানি না বলে কেউ এড়ালে সেও কাফির। ওমর রা: এর উক্তি “যে বললো আমি জানি না আল্লাহ আসমানে আছেন নাকি জমিনে, সে কাফির।”
উল্লেখ্য এই উক্তিটা এখন আবু হানিফা রাহি: এর নামে প্রচার হয়। কিন্তু তখন প্রাচার হচ্ছিলো ওমর রা: এর নামে।
ফিতনা আরম্ভ।
#HabibAqida