১
৩০ বছর আগে। সুরা ত্বাহা শিখছিলাম। "ওয়া মা আ'জালাকা আন কাউমিকা...?" আয়াতে আসলাম। কি তোমাকে তোমার কওম ছেড়ে আসতে...
ভাবছিলাম, আল্লাহ তায়ালা কি এ জন্য রাগ করেছেন?... মুহুর্তের ভাবনা সেখানেই শেষ। সামনে এগিয়ে গেলাম।
২
কিছু দিন পর।
তবলিগের এক মুরুব্বি বলছিলেন "মুসা আ: উনার কওমকে ছেড়ে আসার কারনে ..." সা'দ সাহেব যে বয়ানটা করেন সেটা। বয়ানটা নতুন না। ৩০ বছর আগেও শুনেছিলাম।
ভাবলাম: কি জানি। আমি তো আর সব জানি না।
৩
"নবিগন গুনাহ করেন না। বলতে হবে আদম আ: যে ফল খেয়েছিলেন সেটা ভুল করে খেয়েছিলেন।" বহুবার অনেক মুরুব্বির কাছ থেকে শুনেছি। মাওলানা যুবায়ের সাহেবের বয়ানেও। তাই এব্যপার সাবধান থাকার চেষ্টা করি।
"আর সাহাবা কিরামগন ভুল করেন না", মাওলানা মওদুদির সাথে দেওবন্দি উলামাদের দন্ধ থেকে এটা শিখেছি। তবে নবি ছাড়া আর কেউ মাসুম না। তাই - "গুনাহ করেন না", কথাটা শুধু নবিদের জন্য প্রযোজ্য। অন্যদের ক্ষেত্রে না।
৪
অন্তরে বসিয়ে দিয়েছিলাম, নবিদের ক্ষেত্রে বলতে হবে "ভুল করে"। সাহাবাদের ক্ষেত্রে বলতে হবে "ভুল না"।
আমার কথায় যেন ভুল না হয়। নচেৎ কুফরি ফতোয়া খেতে হবে। কারন এগুলো আকিদার অংশ।
৫
তফসির ছাড়া শুধু কোরআন পড়ে আকিদার এই অংশগুলো জানার উপায় নেই। আমি যেমন করি। পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে। এবং "উস্তাদ ছাড়া নিজে নিজে কোরআনের তরজমা-তফসির পড়া উচিৎ না, করলে পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে" -- এটাও ঐ যুগে অনেকবার অনেকে আমাকে বলেছিলো।
৬
সময় বদলায়।
নবিদের ক্ষেত্রে বলতে হবে ভুল, এটা সম্ভবত এখন আর খাটে না। শায়েখ মুজাফফর বিন মহসিনের ভাইরাল ভিডিওর পর। সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে।
নিজে নিজে কোরআনের তরজমা পড়লে পথভ্রষ্ট হবে, সেটাও বদলিয়েছে। সাদ সাহেব এই কাজ করতেই এখন উৎসাহিত করছেন।
৭
আকিদার সুক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে আমি নিজ মত দেই না। উলামাদের উপর ছেড়ে দেই। বুঝারও দরকার নেই। আমার কাজ হলো এমন কিছু না বলা যে কারো কুফরি ফতোয়া খেতে হয়।
আকিদার এ রাস্তাটা সরল না, জায়গায় জায়গায় ট্রেপ-ফাদ আছে। খুব সাবধানে আকা বাকা করে চলতে হয় ফাদ এড়িয়ে।
৮
সব সময় যে এটা করতে পারি তাও না। আটকিয়ে গিয়েছিলাম আশারি-আথারি তর্কে এসে। এর আগে সব পক্ষের সব কথা মেনে নিয়েও সাবধানে চলা যেতো, এই জায়গায় আর যায় না।
হয় কোরআনের এক অংশ লিটারেলি বিশ্বাস করে অন্য অংশ বলতে হবে মেটাফরিক। বা অন্য অংশ লিটারেল ধরে অপর অংশ মেটাফরিক।
৯
কঠিন সমস্যা। এক দিকে ৯০% আলেম। অন্য দিকে ১০%। এবং ১০% এর মতে ৯০% কাফের।
চুপ থাকার উপায় নেই। "কেউ যদি বললো আমি জানি না আল্লাহ আসমানে আছেন নাকি জমিনে, তবে সেও কাফের।"
কমেন্টাররা কমেন্ট করে, "আপনি চুপ থাকছেন দেখলাম। কিন্তু অন্তরে অন্তরে আপনি যদি ঐ পক্ষেরটা বিশ্বাস করেন তবে আমার দৃষ্টিতে আপনি কাফের।" মিড্যল গ্রাউন্ড বলে কিছু নেই।
এক বিদেশি ভাইয়ের পোষ্ট "আমি ঐসব দেশগুলোতে গিয়েছিলাম। রাস্তায় নেমে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেছি, বলেন তো আল্লাহ কোথায়? তারা সবাই জবাব দিয়েছে <...এই...>। ঐ সব দেশের সবাই কাফের! কোনো মসুলিম থাকে না।"
তাই "এ ব্যপারে চিন্তা করি না" বলেও বাচার উপায় নেই। তারা জিজ্ঞাসা করবে। আপনাকে সঠিক উত্তর দিতে হবে।
১০
"ভাই আমি এগুলো বুঝি না। উলামারা যা বলেন তাই মানি ..." এই কথা বলেও মাফ পাবেন না!
"আকিদার বিষয়গুলো উলামাদের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। নিজে জেনে বিশ্বাস করতে হবে। কেউ যদি বলে উলামারা বলেছেন আল্লাহ আছে তাই আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, তবে কি তার ঈমান থাকবে?" একজন আলেমের স্টেটাস।
ভাবলাম, যদি উলামাদের উপর নির্ভর না করে, নিজে কোরআন পড়ে আমি বলি "আমি এই এই বিশ্বাস করি কারন কোরআনে আছে এই" তাহলেও আমার "ঈমান নেই" ফতোয়া আসতে সময় আরো কম লাগবে।
সুক্ষ্ম বিষয় যেহেতু।
to be cont...