কুরআন বুঝায় পথে আবরণ চারটি ৷
১
প্রথম, এ ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া যে, কোরআনের আক্ষরসমুহকে মাখরাজ (উচ্চারণস্থল) থেকেই উচ্চারণ করা উচিত ৷ কারীদের উপর নিয়োজিত একটি শয়তান এ ব্যাপার তদারকে করে থাকে যাতে সে কারীদের প্রচেষ্টা কোরআনের অর্থ বুঝা থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয় ৷ সে কারীদেরকে প্রত্যেকটি অক্ষর বার বার উচ্চারণ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের মনে বদ্ধমুল ধারণা সৃষ্টি করে যে , অক্ষরটি এখনও সঠিক মাখরাজ থেকে উচ্চারিত হয়নি ৷ সুতরাং যে ক্ষেত্রে কারীদের প্রচেষ্টা ও চিন্তাভাবনা কেবল অক্ষরসমুহের মাখরাজেই সীমিত থেকে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের সামনে কোরআনের অর্থ কিরূপে পরিস্ফুটিত হবে? যে ব্যক্তি শয়তানের এ ধরনের প্ৰতারণার শিকার হয় , সে ক্ষেত্রবিশেষে শয়তানের একজন বড় ভাড়ে পরিণত হয় ৷
২
দ্বিতীয় আবরণ হচ্ছে, কোন মতবাদ শুনে তার অনুসারী হয়ে যাওয়া এবং প্রশংসা করা ৷ এরুপ ব্যক্তি তার বিশ্বাসের শিকলে আবদ্ধ থাকে ৷ ফলে তার অন্তরে নিজের বিশ্বাস ছাড়া অন্য কোন কথা স্থান পায় না ৷ তার দৃষ্টি কেবল নিজের শুনা কথার উপর নিবন্ধ থাকে ৷ যদি সে দুর থেকে কোন আলো দেখতে পায় এবং কিছু অর্থ তার বিশ্বাসের থেলাফ প্রকাশ পায় , তবে অনুসরণরুপী শয়তান তার উপর চড়াও হয়ে বলেও একথা তোমার যনে কিরুপে এল? এটা তো তোমার বুযুর্গদের আকীদার খেলাফ ৷ এর পর লোকটি এসব অর্থকে শয়তানের প্রবঞ্চন্য মনে করে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় ৷
এ অর্থেই সুফী বুযুর্গগণ বলেন, জ্ঞান এক প্রকার আবরণ ৷ এখানে জ্ঞান বলে তারা এমন আকায়েদের জ্ঞান বুঝিয়েছেন, যা অধিকাংশ লোক কেবল অনুসরণের দিক থেকে অবলম্বন করে নেয়, অথবা মাযহাবের প্রতি বিদ্বেযপরায়ণ লোকেরা বিতর্কমুলক বাণীসমুহ লিপিবদ্ধ করে তাদেরকে শিখিয়ে দেয় ৷ নতুবা সত্যিকার জ্ঞান হচ্ছে কাশফ ও অন্তর্বৃষ্টির নুর প্রত্যক্ষ করা ৷ এটা কােনরুপেই আবরণ হতে পারে না, এরুপ জ্ঞানই চরম প্ৰার্থিত বিষয় ৷
৩
তৃতীয় আবরণ হচ্ছে, কোন গোনাহে অব্যাহতভাবে লিপ্ত থাকা অথবা অহংকারী হওয়া অথবা পার্থিব বিষয়াদির মোহে পতিত হওয়া ৷ এগুলোর কারণে অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় এবং তাতে মরিচ৷ পড়ে যায় ৷ আয়নায় মরিচা পড়ে গেলে যেমন তাতে প্ৰতিচ্ছবি যথাযথ প্রতিফলিত হয় না, তেমনি এগুলো থাকলে অম্ভরে সত্যের দ্যুতি পরিষ্কাররুপে ফুটে উঠে না ৷ অন্তরের উপর মােহ ও কামনার স্তুপ যত বেশী হবে ততই এর তরফ থেকে কোরআনের অর্থের উপর বেশী আবরণ পড়বে ৷ পক্ষান্তরে দুনিয়ার বোঝা যত হালকা হবে , ততই অর্থের দ্যুতি নিকটে এসে যাবে ৷ কেননা, যার প্রতিচ্ছবি আয়নার মত , মোহ মরিচার মত এবং কোরআনের অর্থ সেই চিত্রের মত যার প্রতিচ্ছবি আয়নায় প্রতিফলিত হয় ৷ অন্তর থেকে মােহ দুর করা আয়না ঘষে মেজে পরিষ্কার করার অনুরুপ ৷ এজন্যেই রসুলে আকরাম (সাঃ) বলেন : আমার উম্মত যখন দীনার ও দেরহামকে বড় মনে করবে, তখন তার কাছ থেকে ইসলামের ভীতি দুর হয়ে যাবে ৷ তারা যখন সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ ত্যাগ করবে , তখন ওহীর বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে ৷ হযরত ফোযায়ল বলেন : এর অর্থ তারা কোরআনের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়বে ৷
৪
চতুর্থ আবরণ হচ্ছে, বাহ্যতঃ কোন তফসীর পড়ে নিয়ে এরূপ বিশ্বাস করে নেয়া যে , হযরত ইবনে আব্বাস ও মুজাহিদ কোরআনের যে তফসীর বর্ণনা করছেন, তা ছাড়া কোরআনের অন্য কোন তফসীর নেই ৷ কেউ অন্য অর্থ বললে সে তার বিবেক দ্বারাই তা বলে ৷ এরুপ তফসীরকার সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি নিজের মতামত দ্বারা কোরআনের তফসীর করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তালাশ করে নেয় ৷ এরুপ বিশ্বাসও কোরআন বুঝায় ক্ষেত্রে একটি অন্তরায় ৷
চতুর্থ শিরোনামে আমরা বর্ণনা করব যে, মতামত দ্বারা তফসীর
করার অর্থ কি?
- এহইয়া উলুমুদ্দিন, ইমাম গাজ্জালি
দ্বিতীয় খন্ড,পৃষ্ঠা ৪০-৪৪
অনুবাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন।
- Comments:
- ফাজায়েলে আমলে এর বর্ননা আছে। তবলিগে যেটা থেকে তালিম করা হতো আগে।