মেঝোগল্প : মালিকের চাকরি
"দেশে আসলেন, কত খরচ পড়লো?" জানতে চাইলাম মধ্যপ্রাচ্য ফিরত ভাইয়ের কাছে।
"আসলে টিকেট মালিকে দেয়। আমাদের টাকা লাগে না।"
"আর কি কি মালিক দেয়?", আমি উৎসুক।
"থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ফ্রি। তিন বেলা ভালো খাবার দেয়। থাকার জায়গাও সুন্দর।"
"চিকিৎসাও?", কিছুটা অবাক।
"অসুস্থ হলে ছুটি দেয়। ডাক্তার আর ঔষধ ফ্রি। কোনো কারনে হাসপাতালে ভর্তি হলে হাসপাতালের বিল মালিকের।"
মনে পড়লো সুরা শু'আর:
যিনি আমাকে খাওয়ান, পান করান।
আমি যখন অসুস্থ হই, তিনি আমাকে সুস্থ করেন।
আমিও আমার মালিকের গোলাম। উনিও আমাকে খাবার দেন, থাকার জায়গা দেন। অসুস্থ হলে সুস্থ করেন। বিনিময়ে কাজ দিয়েছেন এতটুকু যে আমি উনার ইবাদত করবো।
"কাজের চাপ কেমন?", জিজ্ঞাসা করলাম।
"সকাল ৭ টা থেকে ২ টা। সাত ঘন্টার কাজ। এর পর ফ্রি। কেউ কেউ বিকালে অন্য কম্পানির কাজ করে। তবে ধরতে পারলে তাদের চাকরি চলে যায়। এই কম্পানির খেয়ে পড়ে অন্য শরিকা মানে কম্পানির কাজ করা নিষেধ।"
মনে পড়লো সুরা কাহাফ: সে যেন তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।
আমার মালিকও এটা পছন্দ করেন না যে আমি উনার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করি।
"আপনি কখনো অন্য জায়গায় কাজ করেছেন?"
"না। আমি খাটি মনে মালিকের কাজ করি। মালিকের খুশিই আমার খুশি।"
"ভয় পান বুঝি?"
"প্রথম প্রথম মালিককে ভয় পেতাম। এখন মালিকের প্রতি একটা মায়া চলে এসেছে। ভয় এই যে আমার মালিক আমার উপর অসন্তুষ্ট কিনা! আমাকে চাকরি থেকে বের করে দেন কিনা।"
আমার ভয়ও আমার রব আমাকে এই দ্বিন থেকে বের করে দেন কিনা, এটাই।
"বের করে দিলে?" জবাব জানা আমার জন্য জরুরী। অনেক কিছু শিখছি।
"এই ভয় নিয়ে চলতে হয়। এটাই জীবন" গলায় কিছুটা আবেগ, "আমি ওখানে গিয়ে কুকুরের মত পড়ে থাকতাম।
মালিক আমাকে তুলে এনেছে।
খাইয়েছে। কাপড় দিয়েছে, পড়িয়েছে।
কাজ শিখিয়েছে, চাকরি দিয়েছে।
বলে শেষ করা যাবে না কি কি করেছে।
আমি কৃতজ্ঞ। উনি যা করেছেন তার সবকিছুর জন্য।
যদি আমাকে কখনো বেরও করে দেন,
তবুও আমি মালিকের কাছে পড়ে থাকবো।"
তার চোখ কিছুটা ছল ছল। এর ভেতর দিয়ে দেখতে পারছি মালিকের প্রতি তার গভির ভালোবাসা। শর্তহীন -- একতরফা।
এর পর নিজের অন্তরের দিকে তাকালাম।
- Comments:
- তাহলে হলো। জাজাকাল্লাহ।