প্রসংগ : কোন বই পড়বো?
১
হাতে গোনা কিছু বইয়ের বাইরে এখন আর কোনো বই পড়ি না।
তবে কোনো বৈঠকে বসলেই কেউ না কেউ বলে,
: আমুকের লিখা সেই বইটা পড়েছো?
: না।
: পড়ে দেখো, খুব জরুরী বা খুব সুন্দর বা পড়লে বুঝবা কেন পড়তে বলেছি....
সেই বইটা খারাপ বলছি না। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা তথ্য আমার জানার প্রয়োজন এবং সেই তথ্য ঐ বইয়ে আছে -- এরকম কারন ছাড়া নতুন কোনো বই পড়ার এখন আর ধৈর্য্য হয় না।
যারা প্রশ্ন করেন কোন বই পড়বো? তাদের গাইডলাইন, নিজেকে দিয়ে নিচে দিলাম।
২
মাসলা/মাসায়েল: [হানাফি মাজহাবের জন্য]
১। বেহেস্তি জেওর/গওহর।
জেওর মেয়েদের জন্য, গওহর ছেলেদের জন্য। বর্তমানে দুটো একসাথে করে কমপাইল করে ছাপায়। কিছু বাদ দিয়ে, কেউ কিছু যোগ করে, আবার কেউ কিছু পরিবর্তিত করে। তবে হাতের কাছে যেটা আছে সেটা দিয়ে আরম্ভ করতে পারেন।
২। এর পর এডভান্স চাইলে: ফতোয়ায়ে আলমগিরি:
এটা অনেক পাবলিকেশনের আছে। কেউ সংক্ষিপ্ত করে ছাপিয়েছে, কেউ পূর্ন। বিশেষ করে এখানে রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রশাসন, দারুল কুফর/হরব এবং যুদ্ধের মাসলা/শর্তগুলো দেয়া আছে। যদি কেউ এসব ব্যপারে কনফিউজড হয় তার জন্য।
৩। আরো এডভান্সড : হিদায়া
এটা কওমি মাদ্রাসাগুলোতে পড়ায়। আরবীতে। বাংলা অনুবাদ আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের।
এই তিনটাই যথেষ্ট।
এর বাইরে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের জন্য বর্তমানে অনলাইন/ওয়েব সাইটে যে ফতোয়া কালেকশন আছে সেগুলোকে যথেষ্ট মনে করি। সাধারনতঃ হানাফি মাজহাবে এক মুফতির ফতোয়া থেকে অন্য মুফতির ফতোয়াতে তেমন বিশাল কোনো পার্থক্য হয় না।
৩
হাদিসের বই:
মূল ছয়টি হাদিসের বই প্রথম থেকে শেষ পড়তে হবে। বুখারি শরিফ থেকে ইবনে মাজা পর্যন্ত। প্রথম হাদিস থেকে শেষ হাদিস।
এর কিছু মনে থাকবে কিছু থাকবে না। কিছু বুঝবো কিছু বুঝবো না।
কিন্তু সবই পড়তে হবে। এর পর প্রয়োজনের সময় মনে পড়ে যাবে এটা পড়েছিলাম ওটা পড়েছিলাম এরকম।
৪
তফসির:
আগা থেকে গোড়া তফসির আমি কোনোটাই পড়ি নি। শুধু কোরআন শরিফের অনুবাদ পড়েছি। এবং অধিকাংশ সময় এখনো ব্যয় করি কোরআন শরিফ মুখস্ত করার পেছনে। যেটার উপর ৬/৭ খন্ডে একটা সিরিজ লিখেছিলাম।
তবে যখন কোনো আয়াতের এমন কোনো ব্যখ্যা কারো কাছে শুনি, যেটা আমি পড়ে যা বুঝেছি তার বিপরিত, তখন এর তফসির দেখি উলামারা কি বলেছিলেন সেটা জানতে।
এর জন্য প্রথম চয়েস হলো তফসিরে তাবারী। এটা সবচেয়ে পুরানো তফসির। এবং সবচেয়ে বিশাল। বাংলা অনুবাদ আছে। তবে বাজারে পাওয়া যায় সম্ভবতঃ ১০ খন্ড পর্যন্ত। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরিতে অনেক পুরানো ছাপায় আরো আছে।
দ্বিতীয়তঃ তফসিরে ইবনে কাসির। তাবারির থেকে সংক্ষিপ্ত, এবং এর কয়েকশ বছর পরে লিখা। এটারও বাংলা অনুবাদ আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরটা পূর্ন, কিন্তু অন্যান্য প্রকাশনিরগুলো সংক্ষিপ্ত।
এর বাইরে আরো অনেক তফসির আছে। হাতের কাছে যেটা পান পড়তে পারেন। এর বাইরে বিভিন্ন আইডলজি এবং গ্রুপগুলোর নিজস্ব তফসির আছে যেগুলো সেই আইডলজির ফলোয়াররা পড়ে। এটাও তাদের জন্য ঠিক আছে।
৫
ইতিহাস:
এর জন্য আলবিদায়া ওয়ান্নিহায়া। প্রথম ১০ খন্ডের অনুবাদ আছে। তবে আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন এই বইটার অনুবাদ ছিলো না। এটা আমাকে চাকরিতে ঢুকার পর পড়তে হয়েছে।
৬
তাসাউফ:
এর জন্য গাজ্জালির এহইয়ায়ে উলুম উদ্দিন। আগে এমদাদিয়ার একটা অনুবাদ ছিলো। সেটা এখন নেই বলে মদিনা পাবলিকেশনের অনুবাদ পড়ি।
তবে গাজ্জালির বইয়ের মাঝখান দিয়ে এ দেশের ছুন্নিরা মাঝে মাঝে এক্সট্রা কথা ঢুকায়। সন্দেহের জায়গায় তাই আরবীর সাথে মিলাতে হয়।
বাংলায় আমার পড়ার লিষ্ট আপাততঃ এতটুকুই। :-)
৭
FAQ:
যে বিষয়গুলোর জবাব দেই নি:
"বেহেস্তি জেওরের ওমর-আলির টানা টানি..."
"জর্দার ফরমুলা..."
"গাজ্জালির বই সবার পড়া উচিৎ না...."
এই ধরনের প্রশ্ন।