Post# 1461570394

25-Apr-2016 1:46 pm


(collected)

আলস্যকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে: 'কাজ, সক্রিয়তা বা প্রচেষ্টার প্রতি অনীহা'। আর এই আলস্যকে সালাফগণ তীব্রভাবে ঘৃণা করতেন।
.

উমার ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, ' দরকারি কিছু না করে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোকে আমি ঘৃণা করি।'

ইবন মাস'উদ রা. বলেন, ' এই দুনিয়া বা পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ না করে অলস বসে থাকে এমন ব্যক্তিকে আমি ঘৃণা করি।'
স্বয়ং আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন আল্লাহ্‌র কাছে এই দুআর মাধ্যমে দিন শুরু করতেন, '... আমি আলস্য থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই...'। আসলে অলসতা সুন্নাহর এতটাই বিপরীতধর্মী একটা বিষয় যে, রাসূলুল্লাহ সা. জীবনে একবারও হাই তোলেননি। ইবন হাজার উল্লেখ করেন: ' নবীজির সা. অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল এই যে, তিনি সা. কক্ষণো হাই তোলেননি। ইয়াজিদ বিন আল-আসামের মুরসাল থেকে ইবনু আবি শায়বাহ এবং আল-বুখারি তাঁর তারিখ গ্রন্থে এটি লিপিবদ্ধ করেছেন।'
.

সাখর আল-ঘামিদির সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ' হে আল্লাহ্‌! আমার উম্মাহর ভোরের পাখিদের উপর তুমি রহম করো।' কোনো অভিযান বা সেনাবাহিনী পাঠানোর সময় তিনি সা. সবসময় দিনের শুরুতেই তাদের প্রেরণ করতেন। সাখর নিজে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তিনি ভোরবেলাতেই তাঁর ব্যবসায়িক কাজকর্ম শুরু করতেন। ফলে, একসময় তিনি অস্বাভাবিক রকমের ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।

আলি ইবনে আবু তালিব বলেন, ' সকালবেলা ঘুমানো অজ্ঞতার লক্ষণ।'
.

একবার একদল লোক ফজরের সালাতের পর ইবন মাস'উদের রা. সাথে দেখা করতে আসে। ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও তারা ইবন মাস'উদের রা. ঘরে প্রবেশ করতে ইতস্তত করতে থাকে। ইবন মাস'উদ রা. তাদের এই অস্বস্তির কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তরে বলে যে, তারা এই ভেবে অস্বস্তিবোধ করছে যে হয়তো ওনার স্ত্রী এই সময় ঘরে ঘুমিয়ে আছেন। ইবন মাস'উদ প্রত্যুত্তরে বলেন, 'আপনারা কী মনে করেন আমার স্ত্রী এতটাই অলস?' (ইবন মুফলিহ আল-হাম্বালি এই ঘটনার উপর মন্তব্য করে বলেন: 'এই ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় বিষয় এই যে, সকালবেলার এই সময়টুকু অবহেলা করা উচিত না এবং এই সময়ে ঘুমোনোকে নিরুৎসাহিত করা হয়।') বুখারি এবং মুসলিম উভয়েই এই ঘটনাটি তাঁদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
.

ইব্‌ন আব্বাস রা. একদিন তার এক ছেলেকে সকালে ঘুমুতে দেখে বলেন: “উঠো! তুমি কি এমন সময় ঘুমুচ্ছ যখন রিযক বণ্টন হচ্ছে?”

একজন তাবি'ই বলেন, 'কোনো আলিমকে ফজরের পর ঘুমুতে দেখলে পৃথিবী দুঃখে কেঁদে ওঠে।'

পূর্ববর্তী নবীগণও এমন মনোভাব পোষণ করতেন। নবী দাউদ আ. সুলাইমানকে আ. বলেছিলেন: ' অতিরিক্ত ঘুমানোর ব্যাপারে সতর্ক হও। অন্যরা যখন কাজ করে তখন এই অভ্যাস তোমাকে দরিদ্র করে দিবে।'

'ঈসা ইবন মারইয়াম আ. বলেছেন, ' দুটি স্বভাবকে আমি ঘৃণা করি:
১) রাতে জেগে না থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলায় ঘুমানো,
২) কোনো কারণে আনন্দিত হওয়া ছাড়াই উচ্চস্বরে হাসা।

একজন কবি বলেন: 'নিশ্চয়ই সকালবেলার ঘুম মানুষকে সন্দেহ-সংশয়ে ফেলে দেয়। আর বিকেলবেলায় ঘুমুনো তো পাগলামির নামান্তর।'
.

আল্লাহ্‌র রাসূল সা. বলেন, 'জেনে রাখো, একজন মু'মিনের সম্মান হচ্ছে তাঁর কিয়ামুল লাইল ।'

তিনি সা. আরো বলেন, 'রাতের শেষ ভাগে বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, যদি তুমি সে সময়ে আল্লাহর যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারো, তাহলে তাদের অন্তর্ভুক্ত হও।'

তিনি সা. বলেন, 'আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন: কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি যার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি যাকে প্রদান করব? কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে, আমি যাকে ক্ষমা করব? ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ বলতে থাকেন'

রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন, 'তোমরা রাতের সালাত আঁকড়ে ধর, কারণ এটা তোমাদের পূর্বের নেককার লোকদের অভ্যাস এবং তোমাদের রবের নৈকট্য দানকারী, গুনাহের কাফ্‌ফারা ও পাপ মোচনকারী। এটা শরীর থেকে রোগ-বালাই দূর করে দেয়।'(ইবন রজব এই হাদিসের ব্যাপারে মন্তব্য করেন, 'এই হাদিসের একটি অন্যতম শিক্ষা হলো, কিয়ামুল লাইল এর ফলে সুস্বাস্থ্য লাভ করা যায়। এটি শরীরকে নীরোগ করে।')

তিনি সা. বলেন, 'এমনভাবে ইবাদাত করো যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো। সেটা না পারলে জেনে রাখো যে তিনি তোমাকে দেখছেন। আর এটাই হচ্ছে ইহসান।'
.

আবু সুলাইমান আদ-দারানি বলেন, 'যারা বিনোদনে প্রমত্ত হয়ে রাত কাটায় তাদের চেয়ে যারা কিয়াম করে তারাই নিজেদের রাতগুলোকে বেশি উপভোগ করে। যদি রাত না থাকতো তাহলে আমি এই পৃথিবীতে থাকতে চাইতাম না। '

আল-ফুদাইল বিন 'ইয়াদ বলেন, 'রাতে কিয়াম আর দিনে সিয়াম পালন করতে না পারলে বুঝে নিও যে তোমার পাপকাজ তোমাকে বেঁধে রেখে বঞ্চিত করছে। '

সালাফদের একজন বলেছেন, 'চল্লিশ বছর ধরে সূর্যোদয় ছাড়া অন্য কিছু আমাকে বিষণ্ণ করতে পারেনি। (কারণ সূর্যোদয়ের মাধ্যমেই কিয়াম এর সময় শেষ হয়ে যায়)'
.

'ঘুমানোর সময় তোমাদের প্রত্যেকের মাথার শেষাংশে শয়তান তিনটি গিঁট দেয়। প্রত্যেক গিঁটের স্থানে সে মোহর এঁটে দিয়ে বলে: তোমার রাত এখনো অনেক বাকি, অতএব ঘুমাও। যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকর করে তখন একটি গিঁট খুলে যায়। যদি সে ওযু করে তো আরেকটি গিঁট খুলে যায়। যদি সে সালাত আদায় করে, তো তার সবকটি গিঁটই খুলে যায়, ফলে সে ভোরবেলায় প্রাণবন্ত ও প্রফুল্ল থাকে। অন্যথায় সে অবসাদ ও আলস্য অনুভব করে।'
.

এই হাদিসটির ব্যাপারে ইবন হাজার বলেন, 'এই হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মেজাজ ভালো রাখার গোপন চাবিকাঠি কিয়ামুল-লাইল এর মাঝে লুকিয়ে আছে।' বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন ঘটনা থেকে এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে সব বর্ণনা বলে শেষ করা যাবে না, তবে নিচের ঘটনাগুলো নিয়ে একটু ভাবুন:

'আইশাহ রা. বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্‌র রাসূল সা. কক্ষণো কিয়ামুল-লাইল ত্যাগ করতেন না। অসুস্থ বা ক্লান্ত হলেও তিনি বসে বসে তা আদায় করতেন। অথচ এর ফলে দিনের বেলায় তিনি কখনো ক্লান্ত হননি বরং এর প্রভাব এমন ছিল যে তিনি সা. কখনো হাই পর্যন্ত তোলেননি। রাতভর কিয়ামুল-লাইলের পরেও দিনের প্রথম প্রহরেই যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়তে তাঁর উদ্যমের অভাব হতো না।

ইবরাহিম বিন শাম্মাস বলেন, 'আমি আহমাদ ইবন হাম্বালকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। সে কৈশোর থেকেই সারারাত কিয়ামুল-লাইল করতো। জীবনের এই সময়ের কথা বলতে গিয়েই ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন যে, তিনি কত আগে আগে তাঁর দিন শুরু করতেন। তিনি বলেন, 'আমি হাদিস শুনার জন্য তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে চাইতাম। তখন আমার মা আমার জামা আঁকড়ে ধরে বলতেন, 'অন্তত ফজরের আযান হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আগে মানুষজন ঘুম থেকে উঠুক!''

- মূল তারেক মেহান্নার লিখা।
উনার জেলখানার বর্ননাগুলো বাদ দিয়ে শুধু হাদিসগুলো দেয়া হলো।

    Comments:
  • তারিক মেহেন্নার নাম দিয়ে দিয়েছি নিচে। জাজাকাল্লাহ।

25-Apr-2016 1:46 pm

Published
25-Apr-2016