মিসকিন:
(লিখেছেন সাইমুম সাদী ভাই)
জেদ্দা নগরীর আল বালাদ মার্কেটের অদুরে.'আল বাইক' রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি।
আমার সাথে আছেন প্রখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী রহ.। সময়টা ২০০২ সাল। জীবনে প্রথম বারের মত হজ্বে গিয়েছি তখন।
'আল বাইক' সৌদি আরবের জনপ্রিয় ব্রান্ড। অনেকটা আমাদের দেশের কেএফসির মত। মানুষ লাইন ধরে খাবার কেনে ওখানে।
আল বাইকের ভেতরে বিভিন্ন দেশের মানুষ। বিভিন্ন ভাষার কিচির মিচির। শাদা, কালো, তামাটে বিচিত্র বর্ণের সমাহার।
আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছিলাম নিজেদের মধ্যে। আমাদের ডানপাশে ঐতিহ্যবাহী এরাবিয়ান পাগড়ি পরে বসে আছেন তিনজন। বাম পাশে বেশ অল্প বয়স্ক দুই যুবক। পরে জানলাম এরা জেদ্দা ইউনিভার্সিতে পড়াশোনা করেন। আড়াইজাজারী হুজুর তাদের সাথে কথা বললেন আরবীতে।
দশ পনেরো মিনিট পর জেদ্দা খেলাফত মজলিসের এক ভাই নিয়ে এলেন খাবার। ঠিক তখনই ডান পাশের এরাবিয়ানরা রাগত স্বরে কি যেন বলতে লাগল। বাম পাশের একজন ছাত্র এদের কথার প্রতিবাদই যেন জানাল। কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছিলামনা। ডানের ওরা উঠে চলে গেল। তাদের কথা না বুঝলেও বাংগালি মিসকিন এতটুকু বুঝেছিলাম।
আড়াইহাজারি হুজুর বললেন, এরা সিরিয়ার নাগরিক। বাংগালিদেরকে ওরা মিসকিন হিসেবেই জানে। তারা আমাদের পাশে বসে খেতে ঘৃণাবোধ করছে। সেজন্য উঠে চলে গেছে।
বললাম, বাম পাশের ওরা গেলনা কেনো?
ওরা জেদ্দা ভার্সিটির ছাত্র। সিরিয়ানদের এই মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।
খেতে খেতে সময় চলে যায়। আমরা আল বাইক থেকে বেরিয়ে এলাম।
আজ এক যুগ পর সেই সিরিয়ান ভাইদেরকে মনে পড়ছে। তার এখন কোথায়? বেচে আছে? নাকি সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপের কোনোও শরণার্থী শিবিরে?
কে জানে?
- Comments:
- এবি ব্যংক তখন কাপিতি ব্যংকিং সফ্টওয়ার ব্যবহার করতো, এটা মনে আছে।