আইনুল হুদা ভাইয়ের আরেকটি ব্যখ্যা:
উনি বলছেন:
_____
কথাগুলো একটা অন্যটার বিপরিত।
তাই ধাপে ধাপে উনার কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করি।
- নবীকে উদ্দ্যেশ্য করে আল্লাহ বাশার বলেন নি।
দাবিটা ভুল। নবী ﷺ কে উদ্যেশ্য করেই আল্লাহ বাশার বলেছেন। সুরা কাহাফের শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিথলুকুম...", বাংলা অর্থ:
হে নবী আপনি বলে দেন, "নিশ্চই আমি তোমাদের মত বাশার, তবে আমার উপর ওহি নাজিল হয় যে তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ।"
এই আয়াতে আল্লাহ তায়াল নবী ﷺ কে বাশার বলেছেন।
- এটা কাফেররা বলেছে।
উহু! এটা কাফেরদের কথা না। আল্লাহ তায়ালা নিজের কথা।
- কথাটা কাফেরদেরকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেছেন, মুমিনদেরকে উদ্যেশ্য করে না।
বেশ কয়েকটা মূলধারার তফসিরের কিতাবে ঘেটেও আমি এরকম কোনো ব্যখ্যা পাই নি যে কথাটা আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের উদ্যেশ্যে করে বলেছেন, তাই মুমিনদের জন্য প্রযোজ্য না। অথবা মুমিনদের জন্য ভিন্ন কোনো কথা আছে।
আইনুল হুদা ভাই উনার আরেকটা লেকচারে এই বিষযের উপর ৩০ মিনিট কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানেও কোনো তফসির বা অন্য কোনো কিতাবের রেফারেন্স উনি দেন নি। তাই আমি ধরে নিচ্ছি এই ব্যখ্যাটা উনার মনগড়া। এবং তফসিরের কিতাবগুলোতে এরকম কোনো ব্যখ্যা নেই।
এর উপরে যদি উনি এটা বুঝান, যে আল্লাহ তায়ালা যেহেতু কাফেরদের উদ্দ্যেশ্য করে কথাটা বলেছেন, তাই এই কথাটা ১০০% সত্য না। তবে দাবিটা দাড়ায় আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের উদ্যেশ্য করে মিথ্যা বলেছেন। নাউজুবিল্লাহ। আমরা এ ধরনের বিশ্বাস থেকে পবিত্র।
- নবী বিনয়ের জন্য কাফেরদের সামনে নিজেকে বাশার বলেছেন।
স্বিকার করি বিনয়ের জন্য। এর পর? আমরা বিশ্বাস করি বিনয় করে উনি সত্য বলেছেন। বিনয় করে কেউ বলতে পারে "আমি গুনাহগার"। কথাটা সত্য কারন নবী রসুল বাদে সবাই কম বেশি গুনাহগার। তার অর্থ এই না যে বিনয় করে যা বলেছেন তার উল্টোটা সত্য হতে হবে। তাহলে উনাকে মিথ্যার তোহমদ দেয়া হলো। নাউজুবিল্লাহ। আমরা এটা থেকে পবিত্র।
প্লাস, এটা নবী ﷺ এর নিজে বলছেন না। এটা আল্লাহ তায়ালার কথা "আপনি তাদের বলে দেন আমি তোমাদের মত বাশার..."
- বাশার বলতে অনেক কিছু বুঝাতে পারে। অন্য আয়াতে জিব্রিল ﷺ কে বাশার বলা হয়েছে।
এই আয়াতে "আমি তোমাদের মত বাশার" বলা হয়েছে। মানে আমাদের মত। জিব্রিল আ: এর মত না। আয়াত এখানে স্পস্ট।
- নবীর জাত বাশার এটা তো আইনুল হুদা ভাই স্বিকার করেছেন।
তাহলে তর্ক থাকে কেন? "কথাটা শুধু কাফেরদের উদ্দ্যেশ্যে বলেছেন মুমিনদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন নি" এই দাবির তাহলে আসছে কেন?
- কোরআন শরিফ থেকে প্রমান দেখাও কোনো মুমিন নবীকে বাশার বলেছে?
কোরআন শরিফ মুমিনেদের কথা না। আল্লাহ তায়ালার কথা। মুমিনদের কথা খুজতে হলে অন্য কিতাব দেখতে হবে।
এবং কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নবী ﷺ কে বাশার বলেছেন। সুরা কাহাফ শেষ আয়াত দ্রস্টব্য। যেটার অনুবাদ উপরে দিয়েছি।
- শয়তান, ফিরআউন নবীদের বাশার বলতো।
শয়তান ফিরআউনরা দাবি করতো বাশার নবী হতে পারে না এবং নবী বাশার হতে পারে না। এবং বাশার যদি নবী হয় তবে তাকে কাফিররা মানবে না।
এখন আমিও যদি ঐ একই দাবি করি যে নবী বাশার হতে পারে না, তবে আমার বিশ্বাস আর ঐ শয়তান-কাফেরদের বিশ্বাস একরকম হলো।
বরং আমি আল্লাহর কথা ঐ বিশ্বাস করি যে রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের মত বাশার ছিলেন এবং রসুলও ছিলেন। এবং নবীর বাশার হতে কোনো দোষও নেই।
নবী বাশার হতে পারেন নাকি পারেন না --- এটা আমার আর ফিরআউনের বিশ্বাসের মাঝে পার্থক্য।
- কিন্তু কাফেররা নবী ﷺ কে খাটো করার জন্য এই কথা বলতো। তাই উনাকে বাশার বললে আমরাও উনাকে খাটো করলাম।
বাশার হওয়াকে যদি কেউ খাটো হওয়া মনে করে, তবে সেটা তার বিশ্বাসের সমস্যা, মানে ঈমানে সমস্যা।
বাশার হওয়া দ্বারা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মর্যাদা বিন্দু মাত্র কমে না। আমার কাছে বরং মনে হয় মর্যাদা আরো বেড়েছে। ফিরিস্তারা বাশারকে সিজদা করেছিলেন। এবং ইনসানের জন্যই হলো জান্নাহ। ফিরিস্তাদের জন্য না।
শেষে:
আল্লাহ তায়ালা উনার রাসুলের উপর অজস্র সালাম আর সালাত পাঠাক।
আর বিভ্রান্তকারীদের বিভ্রান্তি থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হিফাজত করুন।
এবং কোরআন শরিফের এমন নতুন ব্যখ্যা যা আগের ব্যখ্যার বিপরতি, তা থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হিফাজত করুন।
তাই, আইনুল হুদা ভাইযের ব্যখ্যা আমি গ্রহন করতে পারছি না।
- Comments:
- https://www.facebook.com/habib.dhaka/videos/vb.552028175/10153357690258176/?type=2&theater