১। সুরা কাহাফ নাজিলের সাথে "ইনশাল্লাহ" বলার একটা ইতিহাস আছে। এবং এখানে রাসুলুল্লাহ ﷺ কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আপনি ভবিষ্যতে কোনো কাজ করবেন বললে ইনশাল্লাহ না বলে ছাড়বেন না।
২। সাধারন মানুষ ধারনা করে ইনশাল্লাহ বলা মানে "করবই" এরকম বুঝায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো তার বিপরিত। এটা অনিশ্চয়তা বুঝায়। করবো যদি আল্লাহ চান। মানে না করলে বুঝে নেবেন আল্লাহ তায়ালা চান নি।
৩। মুমিনের ওয়াদা হলো বাইন্ডিং। কসম করে কিছু বলে না করলে হানাফি মাজহাবে কসমের কাফফারা দিতে হয়। কিন্তু যদি কসমের সাথে ইনশাল্লাহ বলে তবে কিছু লাগবে না। ইনশাল্লাহ বলার কারনে এটা আর ওয়াদা হলো না। :-P
৪। বিয়ের সময় যদি কেউ বলে "ইনশাল্লাহ কবুল করলাম?" তাহলে বিয়ে হবে নাকি হবে না এই বিষয়ে শরিয়াহর বইগুলোতে লম্বা আলোচনা আছে। তখন ইনশাল্লাহ না বলে, বলতে হয় আলহামদুলিল্লাহ। :-D
৫। প্রেকটিসিং মুসলিমরা এগুলো জানে। এবং এভাবে তারা কাজ করে। এ থেকে অনেকে বলে হুজুরদের যদি দেখেন বলে ইনশাল্লাহ তবে বুঝবেন করতে পারবে না। :-)
৬। ২০০০ দশকের কোনো এক সময় পাকিস্তান ক্রিকেটের বড় বড় খেলোয়াড়রা সব তবলিগে ঢুকে গিয়েছে। খেলার থেকে তবলিগের দিকে তাদের মনোযোগ বেশি। অবভিয়াসলি বিশ্বকাপে খুবই খারাপ করলো।
তাদের বিদেশি কোচ এই সবকিছু দেখে তাদের অবস্থা বিশ্লেষন করে একটা বই লিখলেন। তারা খেলা ছেড়ে তবলিগে মনোযোগ দেবার কারনে কি হচ্ছে তার উপর। বইটার নাম দিলেন "ইনশাল্লাহ"। কেন সেটা উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায়।
উনার টার্গেট ছিলো বিশ্বকাপের পর পরই বইটা ছাপাবেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হবার সাথে সাথে উনি মারা গেলেন ঐ হোটেলেই।
আমি এবং অনেকে ঐ সময়ে আশংকায় ছিলাম বইটা ছাপালে কি না কি জানি তবলিগের ভেতরের খবর বাইরে চলে আসে।
উনি মারা যাবার পর আমি সন্দেহ করেছিলাম, পাকিস্তানের খেলোয়ারাই মেরে ফেললো কিনা। কন্সপাইরেসি থিউরি? কিন্তু ডিটেলস পড়ে বুঝলাম যে, না! উনি করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে হটাৎ করে স্ট্রোক করে রক্তপাত হয়ে মারা গিয়েছেন। কন্সপাইরেসির কোনো সুযোগ নেই।
বুঝলাম আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেছেন :-P "ইনশাল্লাহ" বইটা এর পর ছাপানো হয়েছিলো বলে আর খবর পাই নি। :-D
যেমন: "আমাদের ৩১৩ জন সদস্য দরকার যারা মসজিদে ১০০০ টাকা করে দান করবে। ইনশাল্লাহ তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের বদরি ৩১৩ জন সাহাবীর সাথে মিলিয়ে দেবেন।"
অথবা গিল্ট ট্রিপিং স্টাইলে, "খোদার কসম, এই কাজ না করলে হাশরের ময়দানে আমরা কেউ জবাব দিতে পারবো না।"
এই ধরনের কথা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলেমরা যেহেতু বলেন, তাই তারা নিজেরা জিনিসটাকে ডিফেন্ড করেন এইভাবে: "আল্লাহর কোনো কোনো বান্দা আছে যারা কছম খেয়ে কোনো কথা বললে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। আমাদের মাঝেও এমন কোনো আল্লাহ বান্দা থাকতে পারে যার কথা... ..."
______
এ ধরনের ইমোশনাল কথা শুনে ইমোশনাল হতে হয় না। বা বক্তার কথা মেনে নিতে হয় না।
কথোপোকথন:
- আপনার কছম যে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করবেন এমন তো কোনো ওয়াদা নেই?
- হতেও তো পারে। আল্লাহ তায়ালা চাইলে কি না করতে পারেন? আমরা আশা রাখবো বড়।
- তাহলে, আপনি যে কাজটা করার কথা বলছেন সেটা না করেলও আল্লাহ তায়ালা চাইলে আমাকে বদরি সাহাবিদের সংগি করতে পারেন। তাই আমি কাজটা করছি না। কিন্তু আশা রাখছি। যেহেতু উনি চাইলেই পারেন। এবং আমরা আশা রাখবো বড়।
প্রশ্ন
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি দাড়ি রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে গিয়ে এভাবে বলে, আমি যদি আর দাড়ি কাটি তাহলে আমি মুসলমান না। পরে সে দাড়ি কেটেছে। এখন তার বিধান কী? তার ঈমান ও বৈবাহিক সম্পর্কের কী হবে? কেউ কেউ বলেন, তার এ কথা কোনো হলফই হয়নি। কারণ দাড়ি যে একেবারে কাটা যায় না এমন তো নয়। এক মুষ্ঠির বেশি হলে তো কাটা যায়। উল্লেখ্য, তার উদ্দেশ্য ছিল দাড়ি যত বড়ই হোক মোটেই কাটবে না। এক মুষ্ঠির বেশি হলে কাটা যায়- এটা তার জানা ছিল না।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করার দ্বারা ঐ ব্যক্তির ঈমান নষ্ট হয়নি এবং বিবাহও ভাঙ্গেনি। তবে এ কথা বলার দ্বারা দাড়ি না কাটার হলফ হয়েছে। অতএব হলফ ভাঙ্গার কারণে তার উপর কসমের কাফ্ফারা আদায় করা ওয়াজিব। যারা বলেছে, এক মুষ্ঠির বেশি হলে দাড়ি কাটা যায় বিধায় হলফ হবে না তাদের কথা ঠিক নয়। কেননা বৈধ কাজ না করার উপরও হলফ হয়।
আর কোনো অঙ্গীকারের ক্ষেত্রেও ‘আমি মুসলমান নই’ এমন কথা বলা মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহ। অতএব ঐ কথা বলার কারণে তাকে তাওবা করতে হবে।
-বাদায়েউস সনায়ে ৩/১৬; ফাতহুল কাদীর ৪/৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১৩, ৭১৭; এলাউস সুনান ১১/৩৫৮
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
১
উলামা ওয়াজির বা বয়ানকারিদের আমি দেখেছি "খোদার কসম" ব্যবহার করেন অনিশ্চিৎ কিছু বর্ননা করার ক্ষেত্রে।
"খোদার কসম হাশরের ময়দান কায়েম হবে..." কেউ বলেন না। এটা সবাই জানে।
কিন্তু "খোদার কসম এই ঘটনার প্রতিবাদ না করলে হাশরে আমরা কেউ ছাড় পাবো না..." এটা কমন উক্তি। যদিও এর ইলম তার নিশ্চিৎ জানা নেই।
২
আরবদের মাঝে প্রতি কথায় "ওয়াল্লাহ" বলা প্রচলিত। এক সময় ভাবতাম এটা কি ঠিক? পরে জেনেছি "লা ইউয়াখিজুকুমুল্লাহ বিল লাগউই ফি আইমানিকুম..." সুরা বাকারার আয়াত, তোমাদের নির্থক কছমের জন্য তোমাদের ধরা হবে না। কিন্তু ধরা হবে তোমাদের অন্তর যে কসম করেছে তার উপর।
এই আয়াতের উপর ভিত্তি করে তারা এরকম বলে।
৩
কসম খাওয়ার সমস্যাটা শুধু দুই এক জনের মাঝে না, বরং মুসলিমদের সব দলের মাঝে দেখেছি যারা খুবই এনার্জি দিয়ে মটিভেশনাল স্পিচ দেন।
তর্কের সময় রেগে গেলে এটা আরো এক্সট্রিমে উঠে যায় "স্বয়ং নবিও যদি..."।
এগুলো থেকে বাচার উপায় হলো কোনো তর্কেই জান প্রান দিয়ে জিতার চেষ্টা নিজে না করা।
নাস্তিকদের সাথে প্রচন্ড আক্রমানাত্মক তর্ক করতে করতে, কিছু বছর পরে নিজে নাস্তিক হয়ে যাওয়ার ঘটনাও একাধিক আছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের হিফাজত করুন।
১
ডঃ জাকির নায়েক এক লেকচারে বলছিলেন বুখারি মুসলিমের ৯ টা হাদিস জোরে আমিন বলার কথা আছে।
এর পর একজন আলেমের এক ওয়াজের ভিডিও। উনি কোরআন মাথায় নিয় প্রতিবাদ করলেন "আমি কোরআন মাথায় নিয়ে কসম খাচ্ছি। যদি আমার কথা মিথ্যা হয় তবে জান্নাত যেন আমার জন্য হারাম হয়ে যায়। জাকির নায়েক যে ৯ টা হাদিসের কথা বলেছেন সেগুলোতে জোরে আমিন বলার কথা নেই।"
একেবারে চরম কসম। এরকম কসম খাওয়া থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাকে হিফাজত করুন।
এর পর বিভিন্ন জনের পক্ষে-বিপক্ষে হাজারো যু্ক্তির কাট পিস।
২
তাই নিজে খুজে দেখলাম বুখারি-মুসলিমের হাদিসে কি আছে।
لاَ تُبَادِرُوا الإِمَامَ
إِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا
وَإِذَا قَالَ وَلاَ الضَّالِّينَ . فَقُولُوا آمِينَ .
وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا
وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
ফা কুলু আমিন। আমিন বলো। "জোরে" নেই, আছে "বলো"। কিন্তু আমার বিশ্বাস, "বলো" কথার সাথে "স্বশব্দে" ইমপ্লাইড। আস্তে বা মনে মনে বলো হলে বরং "আস্তে" কথাটা থাকতে হতো।
৩
এই শেষ? না। আরো দেখার বিষয় আছে।
হাদিসের প্রথম অংশ চোখে পড়লো। আছে "ইদা কাব্বারা ফা কাব্বিরু" যখন ইমাম সাহেব তকবির বলেন তখন তোমরা তকবির বলো। কিন্তু হানাফি সালাফি উভয় পক্ষ সর্বসম্মত ভাবে আস্তে তকবির বলি। কেউ আপত্তি তুলে না। কেন?
হয়তো এখানে "কুলু" শব্দটা নেই বলে। এজন্য? একটা ব্যখ্যা হতে পারে।
এর পর শেষ অংশ চোখে পড়লো।
وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
যখন ইমাম সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে, তখন "বলো" [কুলু] আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।
এর পরও সবাই এটা আস্তে বলে। আমিনের মত স্বশব্দে বলে না। এখানে তো কুলু আছে!
৪
তবে হাদিসের বিরোধিতা কোন পক্ষ করছে?
ইমাম ফকিহদের কথা বাদ দিয়ে যে যা হাদিস থেকে বুঝে সেটা লিটারেল অনুসরন করলে প্রত্যেকের একটা কনজিসটেন্সি থাকতো। হয় কেউ সবগুলো জোরে। বা কেউ সবগুলো আস্তে বলতো। কারন "হাদিস থাকতে আলেমদের কথা কোনো দলিল না"।
সেটা হয় নি। আমরা মূলতঃ হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে নিজ নিজ আলেম-ইমামদের কথাকে অনুসরন করছি।
৫
"কিন্তু অন্য হদিসে স্পষ্টতঃই বলা আছে <এই কথা> যা থেকে বুঝা যায় <জোরে বা আস্তে> বলতে হবে।"
প্রথমতঃ এখানে ড: জাকির নায়েক এই ৯ টা হাদিসের রেফারেন্স দিয়েছেন। অন্যগুলোর দেন নি। তাই আলোচনা শুধুমাত্র এই ৯ টা হাদিস নিয়েই। শুধু এগুলো থেকে কি বুঝা যায় সেটায় কনসেনট্রেট করলে ভালো হয়।
দ্বিতীয়তঃ ভিন্ন কিতাবের অন্য হাদিস যদি রেফারেন্স হিসাবে নেই, তবে বিপরতি পক্ষের দলিলও দেখতে হবে। অন্য পক্ষেরও হয়তো অন্য হাদিস আছে যেখানে এক্সপ্লিসিটলি "আস্তে" আমিন বলার কথা আছে।
৬
মাজহাবের ইমামদের মত কি?
হানাফি-মালেকিতে আস্তে আমিন বলতে হবে।
আর হাম্বলি-শাফিতে জোরে।
আমার কাছে সবগুলোই ঠিক। সমস্যা হয় যখন উল্টো মতকে আমরা বেঠিক বলতে থাকি। "দলিল নেই।"
৭
ব্যক্তিগত ভাবে আমি আহলে হাদিস মসজিদে একেবারে আস্তে আমিন বলি।
আর রেগুলার হানাফি মসজিদে পড়ার সময় একটু শব্দ করে।
ট্রল মন আমার।
এই প্রসংগে আরো কিছু কথা ছিলো। কিন্তু এখানে কাট করলাম।