আর বুখারি শরিফে ওমর রা: এর কথায় শুধু কোরআন শরিফের কথা উল্লেখ আছে যেটা অনুসরন করলে আমরা পথ পাবো।
"কোরআন আর সুন্নাহ" এর হাদিসের জন্য আমাদের যেতে হবে বুখারি মুসলিম তো বটেই এমন কি প্রসিদ্ধ ৬ কিতাবের বাইরে।
২
তর্কে আমরা এমন অনেক যুক্তি দেখাই যেগুলো শুধু মাত্র উপরে যে কথাগুলো বললাম সেটা দিয়ে ভেঙ্গে দেয়া যায়। অর্থাৎ বিপক্ষকে কনফিউশনে ফেলে দেয়া যায়। যদিও এই কথাগুলো জানি আগে থেকে, কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত কখনো তর্কে এটা প্রয়োগ করিনি। সাইড দিয়ে কেটে গিয়েছি।
যেমন কেউ বললো :
"আমাদের অনুসরন করতে হবে শুধু কোরআন আর সুন্নাহ। আর সহি হাদিস বলতে আমি শুধু বুখারি মুসলিম বুঝি। এই দুটোতে যদি কোনো হাদিস থাকে তবে আমাদের অন্য কোনো কিতাব দেখার দরকার নেই।"
তখন হয়তো বললাম : "কোরআন আর সুন্নাহর অনুসরন করতে হবে কথাটা কোথায় আছে? হাদিসে?"
"হ্যা। জানেন না। বিদায় হজ্জের সময় ... "
"হাদিসটা আপনি দেখেছেন?"
একটু থমকে : "হ্যা। পড়েছি।"
এখানে এসে আমি থেমে যাই। আর কিছু বলি না।
৩
যেই ফিতনায় যে পড়েনি তাকে সেই ফিতনার কথা জানিয়ে লাভ নেই। কনফিউশন বাড়বে।
উল্লেখ করলাম কারন কিছু দিন আগে একভাই এই প্রসংগ এনে তর্ক করতে চেয়েছিলেন। বুঝলাম বাংগালির মাঝে এই যুক্তি এখন প্রবেশ করেছে।
ঐ ভাইকে ব্লক করে দিতে হয়েছিলো কারন উনি প্রথমেই মেজিক ওয়ার্ড "আপনি মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন" উল্লেখ করেছিলেন। এটা বলার পরে আমার পক্ষে আর ডিসকাশন চালানো সম্ভব হয় না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন।
#HabibLogic
প্রথম কথা হলো : সৌদি "সালাফি" বা দেশের "আহলে হাদিস" সবগুলো একেকটা মাজহাব। কোরআন হাদিস থেকে অস্পষ্ট বা বিতর্কিত বিষয়ে তারা সম্মিলিত ভাবে নির্দিষ্ট "একটা" মত বা ব্যাখ্যা অনুসরন করে। যদিও বিপরিত মতের দলিল আছে। সেগুলোকে সম্মিলিত ভাবে "একটা" কারন দেখিয়ে বাতিল করে। [এক্সেপশনের সংখ্যা কম]
"মাজহাব অনুসরন করি না, কোরআন হাদিস অনুসরন করি" কথাটা শুধু ঐ ক্ষেত্রে খাটে যখন আপনি নিজে কোরআন হাদিস পড়ে নিজে নিজে বের করেন নামাজ পড়তে হবে কিনা? কয় রাকাত পড়তে হবে? কি করে জামাত পড়তে হবে? কোনটা করা কতটুকু জরুরি? এই সব। এবং এই ব্যপারে বর্তমান বা অতীতের কোনো আলেমের কথা শুনেন না, বা কোরআন হাদিসের বাইরে অন্য কোন বই পড়েন না।
এবং সে ক্ষেত্রেও আপনি একটা "মাজহাব" অনুসরন করছেন। সেটা হলো আপনার নিজের তৈরি করা মাজহাব। এই মাজহাবের নাম হয়তো আপনার নামে হবে।
to be cont... ইনশাল্লাহ।
১
ফেসবুকে এই সপ্তাহে একটা ডিবেট পোষ্ট হয়েছিলো। বৃটেনে এক বেরলভি আলেম দেওবন্দি আলেমের চ্যলেঞ্জ কবুল করে তর্ক করবেন। আগে থেকে ঘোষনা। এর পর ফেসবুক/ইউটুবে লাইভ।
বেরলভি আলেম প্রথমে বসেই বললেন : "আপনি কি উসুলুল বাহাস জানেন?"
দেওবন্দি আলেম এড়াতে চাইলেন, জানেন না।
বেরলভি আলেম বললেন, "যে তর্কের উসুল জানে না, সে মূর্খ তার সাথে আমি বাহাস করতে চাই না।"
৩০ মিনিটে বেরলভি আলেম জিতে গেলেন।
২
ইদানিং তর্কে জিতার জন্য "উসুল" শিক্ষা খুবই প্রয়োজনীয়। হাদিস নিয়ে তর্ক? প্রথমে জিজ্ঞাসা করবেন "আপনি উসুলুল হাদিস জাননে? এটাই জানেন না? তবে আপনার সাথে কি তর্ক করবো? আপনি জাহেল।" সে অফ ১ মিনিটে।
এরকম "উসুলুল তফসির" "উসুলুল আকিদা" "উসুলুল ফিকাহ" অনেক কিছু আছে।
৩
এই মুহুর্তে ফোকাসটা উসুলের উপর। যখন যা ট্রেন্ড।
ইলম শুধু এতটুকু শিখতে হবে যতটুকু শিখলে আমল করা যায়।
তর্কে জিতার জন্য যতটুকু ইলম লাগে সেই ইলম শিক্ষা করা আমার জন্য ক্ষতিকর।
১
"কিন্তু তর্ক না করলে হক পথ চিনবো কি করে?"
প্রচুর ইলাম শিক্ষা, বা তর্কে জিততে পারা হক পথ পাবার নিশ্চয়তা দেয় না।
২
"তবে?"
কনফিউশনের সময়ে আন্তরিক ভাবে আল্লাহর কাছে হক পথের দিশা চাইতে হবে। মাঝ রাতে উঠে। নামাজের শেষে। যে কোনো নামাজে সুরা ফাতিহা পড়ার সময়।
আন্তরিক হতে হবে। নিজেকে আল্লাহর কাছে একেবার নিচু করে। আকুতি সহকারে। যেন সমূদ্রে বা গর্তে পড়ে গিয়েছে। অন্তরে বিন্দুমাত্র অহংকার উদ্যত না রেখে।
আল্লাহ তায়ালা পথ দেখাবেন।
৩
"উপরে যা বললেন সে ব্যপারেও কি দ্বিমত-তর্ক আছে?"
হ্যা। আছে। অনেকে বলবে "হারাম-হালালের ব্যপারে ইস্তেখারা জায়েজ নেই। উসুলে-ইস্তেখারা জেনে এর পর কথা বলবেন।"
In fact এই কথাটাই দুজন শুনিয়ে গিয়েছিলো কিছু দিন আগে। তবলিগের দ্বন্ধের সময়ে।
১
এটা আমার জন্য না। হানাফিতে সোয়াবের ব্যপারে জয়িফ হাদিস গ্রহনযোগ্য। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের সালাফি ভাইদের জন্য। উনারা কি করবেন? তাই উনাদের প্রশ্ন আমাকে ঘেটে এনে বলতে হয় "এটা সহি বা এটা জয়িফ"।
এতে
১। সময় বেশি লাগে।
২। আমার কোনো লাভ নেই।
৩। করলেও পোষ্টে তর্ক বাড়ে।
২
যেমন এখন একটা হাদিস পোষ্ট করতে চাচ্ছিলাম। যে ১০ বার কুলহু আল্লাহ পড়বে জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা তাকে ১টা ঘর তৈরি করে দেবে।
সহি?
islamqa বলছে সহি না। জয়িফ। শায়েখ ইবনে বাজের তাহকিক।
https://islamqa.info/ar/answers/118152/
কিন্তু শায়েখ আলবানি এর কোনো মত এখানে নেই। কেন নেই এটা পরে বুঝলাম। আলবানির মতে এই হাদিস সহি। সহি আল জামিয় ৬৪৭২ এ হাদিসটা আছে।
http://www.almeshkat.net/vb/showthread.php?t=138741
তবে কি বুঝবো?
আমি বলে দেবো হাদিসটা সহি? বলে দেবো হাদিসটা জয়িফ?
সহি জয়িফ পুরোটা যে ব্যক্তির-মত এটা আমি জানি। হাদিস যখন পড়তাম তখনই দেখতাম একই হাদিসে লিখা অমুকের মতে সহি, অমুকের মতে গরিব, অমুকের মতে হাসান।
কিন্তু আমাদের সালাফি ভাইরা এটা স্বিকার করে না। তাদের মতে সহি জয়িফ এক্সাক্ট সাইন্স। এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
৩
এর পর প্রশ্ন আসে উনাদের সমস্যার সমাধান আমাকে করে দিতে হবে কেন? কারন হানাফিতে এই ব্যপারে সহি-জয়িফে দুটোই গ্রহন যোগ্য।
হানাফি-সালাফি উভয় পক্ষকেই মানিয়ে চলার চেষ্টা এমন একটা সমস্যা যার কোনো সমাধান নেই। লাভও নেই।
কিন্তু না করলে কমেন্টে কেউ না কেউ তর্ক নিয়ে আসবে।
সত্যিকারে যে জিনিসগুলো নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি তর্ক করি সেগুলোর ব্যপারে হাশরে আমাকে জবাব দিতে হবে বলে আমি আশংকা করি না।
আমি মাজহাবি নাকি আহলে হাদিস? এটা নিয়ে বিপদে পড়ার আশংকা করি না।
ইমাম আবু হানিফা এসে বলবেন "আমি কি তোমাদের বলেছিলাম আমাকে অনুসরন করতে?" -- এটাও আমার আশংকা না।
অথচ এগুলো নিয়ে আমাদের তর্ক বেশি।
কিন্তু স্পষ্ট হুকুমগুলো স্পষ্ট। নামাজ পড়েছিলাম কিনা। জুলুম করেছিলাম কিনা। পিতা-মাতার বাধ্যতা। মিথ্যা না বলা। সৎ চরিত্র-ব্যবহার। মুসলিমদের গালি না দেয়া। এগুলোর ব্যপারে মাজহাবগত কোনো বিভেদ নেই।
এগুলোর ব্যপারেই জবাব দিতে হবে। এটা ভয়।
ফিকাহর ইখতেলাফি বিষয়ে তর্ক করার জন্য আলেমরা আছেন। আমাদের সবার এগুলো নিয়ে তর্ক করার দরকার নেই।
সাইন্টিফিক রিসার্চ? এর জন্যও লোক আছে।
এ ধরনের বিভিন্ন কাজের জন্য ডেডিকেটেড কিছু কর্মি আছেন, যারা ঐ কাজে ভালো। আমাদের নিজেদের ঐ কাজে যাবার দরকার নেই। আবার যারা ঐ সব কাজে ডেডিকেটেড আছেন তাদেরকে নিষেধ বা নিরুৎসাহিত করার দরকার নেই।
বিভিন্ন কাজের জন্য কিছু লোক লাগবে, এবং তারা আছেন।
এটা নিয়ে ছেলেপেলেরা একটা সিগনিফিকেন্ট সময় ব্যয় করে। নিচে আমার অবস্থান।
ধরে নিলাম এর মাঝে কোনো একটা অন্যটা থেকে বেশি সঠিক। কিন্তু হলেও পার্থক্যটা এত বেশি না, যে আমল করে কভার করা যাবে না।
যেমন ধরলাম হানাফি বেশি সঠিক। এখন সালাফি কোনো ভাই যদি তাকওয়া আর আমলের দিক থেকে অল্প কিছু বেশি করে, তবে সে হানাফি ভাইয়ের থেকে এগিয়ে যাবে। যদিও সে অপেক্ষাকৃত কম সঠিকটার উপর আমল করছে।
আর সত্যিকারে আল্লাহ তায়ালা আমাদের যত সময় দিয়ে রেখেছেন তাতে অল্প না, আমল অনেক বেশি করা সুযোগ আছে।
তাই আমার কাছে,
- কোনটা অপেক্ষাকৃত বেশি সঠিক, এই রিসার্চে প্রচুর সময় ব্যয় করা। এর অর্থ আমার সময়টা খুব একটা কাজে লাগানো হলো না।
- কোনটা ঠিক এটা নিয়ে তর্কে লিপ্ত হওয়া। আমার সময় কিছুটা খারাপ কাজে ব্যয় হলো। ঝগড়া, ঘৃনা, একগুয়েমির দিকে যাওয়া হবে।
- সময় পুরোটা বিপরিতপক্ষকে আক্রমন করে করে ব্যয় করা। আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এর দ্বারা শুধু আমার ইগো বুস্ট হচ্ছে আর কিছু না। যত জায়গায় আমি আক্রমনে সিমা অতিক্রম করছি সবগুলো আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেবেন আমার দিকে - দুনিয়াতে।
উত্তর :
হ্যা ছিলেন। এবং কোনো একজন এই ব্যপারে দ্বিমত পোষন করে নি। উনি খলকে কোরআনে বিশ্বাসি ছিলেন এবং পরবর্তিতে ফিরে আসেন। কিন্তু উনার ইরজা থেকে ফিরে এসেছেন এমন প্রমান নেই।
- রাবি বিন হাদি আল-মাদখালি।
http://www.rabee.net/ar/questions.php?cat=37&id=581
শিক্ষা?
একজন সালাফির পক্ষে হানাফি ফিকাহ মেনে নেয়া কেন প্রায় অসম্ভব একটা টাস্ক এর ইন্ডিকেশন এখানে। বাকি মাজহাবগুলোর ব্যপারে তারা নম্র হতে পারে। কিন্তু হানাফি? উহু।
তাই মানানোর চেষ্টা না করে, "মানে না" এটা ধরে নিয়ে এগুনো ভালো। তর্ক কমবে।
by the way : এটা মাদখালি সাইট। মাদখালিরা সালাফিদের থেকে ভিন্ন কিনা, বা তাদের মাঝে কি পার্থক্য, বা গভীর কোনো পার্থক্য আছে কিনা জানা নেই।
এর পর যত পড়া-লেখা করি, দেখি ঐ নিজের বুঝা জেনারালাইজড এজামপশন গুলোই ঠিক।
তাই পড়া দ্বারা কি লাভ হয়? নিজের পুরানো বিশ্বাস রিইনফোর্সড হয়। নতুন কিছু দ্বারা পরিবর্তিত হয় না। আগে হয়তো তর্কে নামলে হেরে যেতাম। এখন তর্কে নামলে আমি দলিল দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারবো।
কিন্তু বিশ্বাস যা ছিলো তাই।
এটা শুধু আমার না। একজন সালাফি, তবলিগি, চেতনাবাদি, ছু্ন্নি, মাজহাবি সবার ক্ষেত্রে একই হয়।
তাই একটা লেভেলের পরে ইলম অর্জন করা দ্বারা শুধু নিজের তর্ক করার ক্ষমতার উন্নতি হয়। বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে না।
তাই এর পর প্রশ্ন আসে :
- কতটুকু ইলম তবে উপকারি ইলম?
পড়ে।
এজন্য যারা না হকের উপর থাকে তাদের অন্তর অস্বস্তিতে থাকে। ছট ফট করতে থাকে। বিপক্ষকে বার বার গালি দিতে থাকে। প্রচন্ড তর্ক করতে থাকে।
এগুলো তার অন্তরের দাগের রিফ্লেকশন।
তাই দুই দলের মাঝে কোনটা বেশি হক এটা নির্ধারনের একটা উপায় হলো তাদের ব্যবহার দেখা।
আর নিজে? নিজের অন্তর দেখা।
আর সব কিছুর মতো এটাও ফুল প্রুফ না।
কিন্তু একটা ইনডিকেশন, একটা সাইন।
অথবা,
এই ব্যপারে যারা আগে কাজ করে গিয়েছেন তাদের একটা ধারাকে অনুসরন করে, জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করা যায় কোরআন শিক্ষা, ইবাদত, আমলে।
উনি ছিলেন তর্কের ঘোর বিরোধি। বলতেন "আমাদের মাঝে তর্ক নেই" "আমরা তর্ক করি না" "তর্ক করতে চাইলে ইরাকে যাও"।
এক লোক এসে উনাকে বলেন
"আমি আপনার সাথে তর্ক করতে চাই"
উনি জবাব দিলেন,
"তুমি তর্ক থেকে কি উপকার পাওয়ার আশা করো?"
"যদি আমি জিতি তবে আপনাকে আমার অনুসরন করতে হবে।"
"আর যদি আমি জিতি?"
"আমি আপনার অনুসরন করবো।"
"যদি তৃতীয় একজন এসে আমাদের দুইজনকেই হারিয়ে দেয়?"
"তবে আমরা ঐ লোকের অনুসরন করবো।"
"এরকম করলে প্রতি দিন তুমি একটা ভিন্ন দ্বিনের উপর থাকবে। তুমি চলে যাও।"
আমি হানাফি-সালাফি-জাকির নায়েক-চরমোনাই-আশারি-আথারি কাউকে গোমরাহ মনে করি না। সবাই কে আহলে সুন্নাহর মাঝে ধরি। তাই "কারা সঠিক?" এই প্রশ্ন আমার কাছে কোনো তর্কের বিষয় না। "ঐ দল গোমরাহ কিনা?" -- এই দাবি নিয়ে আমার সাথে বিভিন্ন দলের খোচাখুচি-তর্ক-আক্রমন।
কারন প্রতিটা দলের মতে তাদের পাশের দল গোমরাহ।
কিন্তু আমার মতে তারা গোমরাহ না।