অনেক দিন পর দেখা। স্বভাবতই উনার বর্তমান দৃষ্টি ভঙ্গি জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো। প্রশ্ন করতে হলো না। আমাকে বসিয়েই উনি কথা আরম্ভ করলেন,
- মদ খাওয়া হারাম, তাইনা?
আলেম মানুষ। জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করে গেলাম। আলেমদের সাথে আমি তর্ক করি না। কখন আবার উল্টো আমাকে কুফরি ফতোয়া দিয়ে দেয়।
- তাই বিসমিল্লাহ বলে কেউ মদ খেলে সে কাফির। কারন মদ খাওয়াটাকে সে হালাল মনে করছে।
ডিসকাশন এবার কোন দিকে যাবে চিন্তে করছি। Mystery পছন্দ করি।
- গনতন্ত্র হারাম কারন তারা "জনগন সকল ক্ষমতার উৎস" মনে করে।
তবে কার মত "কি", এটা নিয়ে আলোচনা করি। জানা থাকা ভালো, যদি সহ্য করতে পারি। আহলে হাদিসের মতে এই হুকুম। হানাফিদের মতে ঐ হুকুম। হাম্বলিদের মত এটা। শিয়াদের মত ওটা। যে যেই মত পথের অনুসারী।
ব্যক্তিগত ভাবে, আমি মাসলা মাসায়েলের ব্যপারে দেওবন্দি ওলামাদের মত অনুসরন করি।
৮০র দিকে তর্ক করতাম নাস্তিকদের সাথে। ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ নেই সেটা নিয়ে। এখন চিন্তে করি দরকার কি ছিলো? আমি বিজ্ঞানের উপর ঈমান আনি নি। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কথার উপর ঈমান এনেছি।
৯০এ তর্ক করতাম আহলে হাদিসদের সাথে। এখন চিন্তে করি, দরকার কি ছিলো? তাদের সাথে হাম্বলি মাজহাবের সব হুকুম এক। যে যেটা নেয়।
২০০০এ কোরআন পন্থিদের সাথে তর্ক করতাম। এখন মনে হচ্ছে তারা হক নাকি না-হক সেটা দ্বিতীয় ব্যপার। আমি তাদেরকে যা যা খারাপ কথা বলেছি তার জন্য এখনো আফসোস করি। আল্লাহ তায়ালা আমাকে ধরেন কিনা।
এখন, ২০১০এ? এখন মনে হয় তর্ক যদি করতে হয় তবে করা যায় মানহাজপন্থিদের সাথে। কিন্তু জীবনে তর্কের ব্যপারে অনেক এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে এখানে দাড়িয়ে চিন্তে করছি --- দরকার আছে কি?
এর সহজ পদ্ধতি কি হতে পারে সেটা চিন্তে করছি। বিনা কারনে মুসলিম ভাইদের alienate বা তাদের মনে কষ্ট দেবার কোনো মানে নেই।
কিন্তু সবাই সব কথা শুনতে পছন্দ করেন না। এই puzzle এর solution টা কি হতে পারে?
কেউ যদি বলে পৃথিবীটা গোল নয়, বরং ফ্লেট। এটা নিয়ে আমি তার সাথে তর্ক করি না। এখানে আমি জানি। সন্দেহ ছাড়া। :-D
এর পর Slashdot এ। সেখান থেকে, Fark, Reddit হয়ে এখন ycombinator এ।
এর পর তর্কের ধার কমে এসেছে। অনেকদিন পর আজকে আবার তর্ক করে ভালো লাগলো।
যাদের আঘাত দিয়েছি তাদেরকে Sorry :-)
জাজাকাল্লাহ।
অনেক আগে। মসজিদে নতুন এক ইসলামি একটিভিস্ট গ্রুপ আমাকে ধরলো তাদের দলে আমাকে কনভার্ট করার জন্য। অনেক কষ্টে কাটালাম। তখন আসর থেকে মাগরেব হয়ে গিয়েছে।
কয়েকদিন পর। ঐ লোককেই আবার দেখলাম মসজিদে। এবার বৃদ্ধ এক আল্লাহর বান্দাকে ধরেছে। আমি চিন্তে করছি, আমি জানি তার শিক্ষাটা ভুল। এই বৃদ্ধ জানে না। সে তো পথ হারা হয়ে যাবে!
বৃদ্ধ দেখলাম তার সব কথায় প্রশস্ত হাসি মুখে জ্বী, হ্যা করে যাচ্ছে। যেখানে আমি অনবরত তর্ক করে যাচ্ছিলাম। এর পর তার কথা শেষ হলে বললো, "হ্যা ভাই। নামাজ পড়তে হবে। আল্লাহর হুকুম মানতে হবে।" বলে নামাজে দাড়িয়ে গেলো। ঐ লোকের এতক্ষনের কথার কোনো প্রভাব তার মাঝে নেই!
আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখিয়ে দিলেন কিভাবে উনি ঐ বৃদ্ধকে হিদায়ার উপর রেখেছেন।
বুদ্ধি বা তর্ক এখানে ছিলো না।
"ব্যাপার হৈল ফ্রি মেসন-ইলুমিনাটি নিয়ে গবেষণার চেয়ে যে সূরা কাহফের দশ আয়াত মুখস্থ থাকা অনেক বেশি জরুরি সেটা মানুষ বুঝতে চায় না।"
\-- Umar Yousuf
"জ্বী। আমি একজনকে মুখস্থ করতে বলার এক সপ্তাহ পরে বিশাল তর্ক শুরু করলো আসহাবে কাহাফের সংখ্যা নিয়ে!"
\-- Mohammad Javed Kaisar
এভেয়েড করতে চাইলেও ইদানিং কেমন যেন তর্ক জড়িয়ে যাচ্ছি। তাই নিজের জন্য রিমাইন্ডার। Evil তর্কবাগিস হতে চাইলে, তার জন্য Guideline. :-)
১। তর্কে আপনি যদি জিততে না চান, তবে বিপক্ষ আপনাকে হারাতে পারবে না, ইনশাল্লাহ। সে ক্ষেত্রে তারা রেগে যাবে। এবং রেগে গেলে আপনি জিতে গেলেন। :v
২। নিজের পক্ষের যুক্তিগুলো পারত পক্ষে প্রকাশ করবেন না। বরং তাদের যুক্তি দিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করতে থাকুন যতক্ষন পারেন। আপনি আপনার যুক্তিগুলো সামনে নিয়ে আসলে, তারা ঐগুলো দিয়ে আপনাকে ঘায়েল করে ফেলবে।
৩। ট্রাম্প কার্ডটা কখনো খেলবেন না, মানে আপনার পক্ষে সবচেয়ে বড় ও শেষ যুক্তি যেটা সেটা প্রকাশ করবেন না। যদি কখনো ট্রাম্প কার্ড খেলতে হয় তবে বুঝবেন এই তর্কে বরং আপনার না জড়ানোটাই উচিৎ ছিলো। এবার কোনো রকমে বেচে এলেন। :-D
যুক্তি-তর্ক দিয়ে নয় বরং অন্তর দিয়ে ভাল ও মন্দের পার্থক্য করবে। যদি মু'মিন হও তবে তোমার অন্তরে আল্লাহ তায়ালা বিচক্ষনতা দিবেন যা দিয়ে তুমি হক আর না-হককে চিনতে পারবে।
সাবধান! এর পর কারো কারো সাথে তর্কে যাবে না, কারন হিকমত যুক্তি দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। তুমি যুক্তিতে হারবে, আর পথ ভ্রষ্ট হবে।
মনে রাখবে: তোমার নবী ﷺ যুক্তি-তর্ক দিয়ে দ্বীন ইসলামকে প্রচার করে যান নি।
কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আমার বেশ খারাপ লাগে। বিশেষ করে মুসলিম ভাইদের সাথে। স্পেশিয়ালি যখন তার সাথে আমার ডিসএগ্রিমেন্টের কিছু নেই। এবং অধিকাংশ মুসলিমের সাথে আমার মেজর ডিসএগ্রিমেন্ট নেই। আমি বলছি না "আপনি ভুল", তবে আমি স্পেসিফিকেলি "এই" স্কুল অফ থট ফলো করি।
অধিকাংশ তর্কে আমি অংশ নেই না। নিজের আইডোলজি বা একশনকে অন্যের কাছে ডিফেন্ড করাও পছন্দ করি না। কারন যে মুহুর্তে আমি ডিফেন্সে যাবো সে মুহুর্তে তর্কে জড়িয়ে যাবো।
এর পরও যদি pushy কেউ ধাক্কা দিতে থাকে তবে স্পষ্ট করে বলি: যেই রুলিংটা আপনি আমাকে শিখাতে চাচ্ছেন সে রুলিংটা আমি জানি। "এই এই" তো? এবং জেনেও আমি নিজের জন্য উল্টো ঐ পথ সিলেক্ট করেছি।
কেন? জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেই: "আমার কাজ বা কথা শরিয়তের কোনো দলিল না।" বোঝাতে চাচ্ছি, "আমার স্বিদ্ধান্ত আমি ডিফেন্ড করছি না। কারনটা বলে আমি তর্কে জড়াতে চাচ্ছি না। আমাকে আমার পথে চলতে দেন।"
এর পরও যদি সে bold থাকে, এবং আমাকে উপদেশ ও ডিরেকশন দিতে থাকে তবে আমাকে বাধ্য হয়ে তার সাথে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়।
কাজটা আমাকে কষ্ট দেয়। তবুও করি এই আশায় যেনো সামনে সম্পর্ক আরো খারাপ না হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।
____________
এটা আমাদের নিজেদের সাবধানতার জন্য লিখলাম কারন দুরত্বটা সৃষ্টি হয়ে গেলে দুপক্ষেরই খারাপ লাগতে থাকে।
আপনার সাথে আমি একমত না হতে পারলে আমার আরকি করনীয় আছে?
তাই এটা কি ভালো হয় না যে, আপনি যদি কনফিডেন্ট হন আপনার শায়েখর মত ঠিক তাহলে আপনি আপনার শায়েখকে অনুসরন করবেন?
এর পর কি তর্ক থাকে? :-D
এজন্য বলা হয়: আপনি আমার শায়েখ না। বা আমিও আপনার শায়েখ না।