জান কবজ করার জন্য ফিরিস্তারা আসেন। বুজুর্গ মানুষ জিনদেরও দেখতে পারে ও চিনে, কিন্তু জীবিত অবস্থায় ফিরিস্তাদের দেখে কোনো বুজুর্গ অভ্যস্ত না।
তাই অবাক হয় : এরা কারা? আমার বাসায় আসছে।
বহু বহু লোক মৃত্যুর আগে ঘরে তাদের আসার কথা বলে : আমি তাদের দেখতে পারছি।
এবং ঐ মুহুর্তে সে জানে সে জান্নাতি নাকি জাহান্নামি।
ফিরিস্তারা যদি সাদা পোশাকে আসে, হুজুরদের মতো দেখতে, তবে জান্নাতি।
যদি কুৎসিৎ চেহারায় গদা নিয়ে আসে, তবে সে জাহান্নামি।
প্রচুর লোকের বর্ননা শুনেছি মৃত্যুর আগে কেউ বলছে : বাসায় হুজুর আসছে। তাদের বসাও। নাস্তা দাও। মহিলা হলে বলে আমার মাথায় ঘোমটা দাও।
প্রচুর বর্ননা শুনেছি অন্য কেউ বলছে : জানালায় কে যেন গদা নিয়ে দাড়িয়ে আছে, আমাকে মারবে। তোমরা তাকে তাড়াও।
আমরা আল্লাহর দিকে ফিরবো।
এলাকায় একজন ছিলো ইয়ংকালে কমুনিষ্ট পার্টি করতো। ৯১ এ কমুনিজমের পতন। শেষ বয়সে সে মসজিদে নামাজ পড়া আরম্ভ করে নিয়মিত।
একদিন নামাজ পড়ে বাসায় এসে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকে। মুখ ঘামতে থাকে প্রচন্ড। একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে। এর পর মারা যায়।
কি শিখবো?
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের মৃত্যু ঈমানের উপর করেন। শেষটা যেন ভালো করেন।
কবরে একজন থাকবে আমার সংগে। এক জন যাকে আমি জিজ্ঞাসা করবো কিছু না জানলে, সে জানাবে। তার সাথেই কথা বলতে হবে সময় কাটাতে। সে আমার বিপদে সাহায্য করবে, উপদেশ দেবে।
সে আমারই অংশ। আমার নেক আমল। কিন্তু এখন আলাদা সত্তার মতো থাকবে।
তাই নেক আমাল বাড়াই। সে আমার বন্ধুর মত পাশে থাকবে, কবরে, হাশরে, পুল সিরাতের উপর। আমার হাত ধরবে, আমাকে বলবে এই করো, এই করো না, এখন ঐ দিকে যাও, ওটা পার হয়ে যাও।
সে কোনো ফিরিস্তা না।
দুনিয়ায় যে যত পেট ভরে খাবে আখিরাতে সে তত অনাহারে থাকবে। আখিরাত এখানে জান্নাত না। জান্নাতে সবাই খাবে খাবে।
আখিরাত এখানে হাশরের মাঠের লম্বা ১টা দিন। যে দিন কেউ খাবে। কেউ অনাহারে থাকবে। এর দৈর্ঘ ১০০০ বছর।
সে ততটুকু খাবে যে যতটুকু দুনিয়াতে অনাহারে ছিলো।
রাসুলুল্লাহ ﷺ একারনে পরিমিত খেতেন, অতিরিক্ত না। এবং অনেক সময় স্বেচ্ছায় খালি পেটে থাকতেন।
আল্লাহ তায়ালা ঐ দিনের জন্য আমাদের তৈরি করুন।
জান্নাতে ঢুকার আগে একটা নদি আছে নাম "আবে হায়াত"। সবাই এটা সাতরে পার হবে জান্নাতের দিকে যেতে।
যেই এটাতে ডুব দেবে তার শরিরের সমস্ত কাটা ছেড়া ভাঙ্গা পুড়া অদৃশ্য করে দিয়ে নতুন শরির নিয়ে ডুব থেকে উঠবে। নিখুত নিঃরোগ সুস্থ শক্তিশালি সুন্দর। এর পর আর দুঃখ কষ্ট নেই।
আরো আগে আসি। হাশরের ময়দানে যে উঠবে তখন দুনিয়ার অন্ধ আর অন্ধ থাকবে না। যার পা নেই তারও পা হয়ে যাবে। হাশরের ময়দানে প্রত্যেকের শরির আল্লাহ তায়ালা নতুন করে সৃষ্টি করবেন। আকাশে থেকে বৃষ্টির ফেলে যেখানে পানির বদলে পড়বে প্রোটিন। মায়ের গর্ভের বদলে শরির তৈরি হবে মাটির নিচে কবরের ভেতর। এর পর কবর ফুড়ে মানুষ বের হয়ে আসবে যেমন গাছ বের হয়। সবাই নতুন করে জিবিত। নতুন শরির, নতুন দেহ নিয়ে।
কেবল একটা জিনিস এই দুনিয়ারটাই, মেরুদন্ড থেকে একটা ছোট হাড়।
আল্লাহ তায়ালা ঐ দিনের জন্য আমাদের তৈরি করুন।
হাশরের ময়দান কোথায় কায়েম হবে আল্লাহ জানেন। যদি দুনিয়ার তুলনা দেই :
তবে এখান থেকে সিরিয়ার কাছে পর্যন্ত আমাদের হেটে যেতে হবে কবর থেকে উঠার পরে। ৮ হাজার কিলোমিটার।
এর পর দাড়িয়ে থাকতে হবে ৮০ বছর আল্লাহ তায়ালা ফিরিস্তাদের নিয়ে নামার আগে পর্যন্ত। তার পর আমার বিচার হওয়া পর্যন্ত দাড়াতে হবে। অর্ধেক দিন পার হবার পরে পুল সিরাতের দিকে। অর্ধেক দিন লম্বা ৫০০ বছর।
হাটা।
কবর থেকে উঠে ৮০০০ কিলো হাটা।
পুলসিরাতের উপর দিয়েও হাটা।
কোনো বিশ্রাম নেই।
ঐ পারে জান্নাত।
পুলসিরাতের উপর তাকে আটকাবে পাওনাদাররা, দাবিদাররা। তাদের পাওনা মিটাতে হবে।
এর পর কিছু না থাকলে নিচে পড়ে যেতে হবে।
এর পরও আল্লাহ তায়ালা টিকিয়ে রাখলে ঐ পারে।
বহু কষ্ট বহু পথ হেটে এসে।
দুনিয়ার কষ্ট। মৃত্যুর কষ্ট। কবরের কষ্ট। হাশরের কষ্ট। পুল সিরাতের কষ্ট।
কিন্তু সামনের এই শেষ নদিটা পার হতে পারলে আর কষ্ট নেই। এর পর এমন দৃশ্য যার জন্য আমল কারিরা আমল করে।
বোনাস : এখানে সবার বাসা। স্থায়ি ঠিকানা।
আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন। মাফ করুন।
আল্লাহর বান্দা। সে আল্লাহর সম্পদ। আল্লাহ তার মালিক।
আল্লাহ তাকে পাঠিয়েছে পৃথিবীতে কিছু কাজ দিয়ে।
সে কাজ করেছে যতটুকু পারে। কিছু ঠিক কিছু ভুল।
কাজ শেষ। এখন সে ফিরে যাচ্ছে।
"আর থাকবে না?"
না, ফিরতে হবে।
"এখনই?"
হ্যা। এখনই।
মালিক কিছু দিনের জন্য পাঠিয়েছিলেন।
মালিক আবার ডাক দিয়েছে, সে তার মালিকের কাছে ফিরে যাচ্ছে।
"ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।"
এটা মৃতের জন্য দোয়া না। এটা নিজের পরিচয় দেয়া।
আমরা আল্লাহর জন্যই। আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো।
১
জীবন একটাই। পরিক্ষা একবারই।
এত সব কিছুর পরও যদি দেখি জান কবযের সময় আযাবের ফিরিস্তারা এসেছে। তবে কোনো প্লান-বি আছে?
২
সিলেটের মাদ্রাসার মুদাররিস। পীর। মারা যান গতবছর। ইউটুবে সার্চ দিয়ে লেকচার শুনি। বলছেন :
যদি আল্লাহ তায়ালা সাত আসমান আর জমিনকে কামান বানান। আর সেই কমান দিয়ে উনি তোমাকে মারতে আসেন। তখন তুমি কি করবে?
উনি বললেন : আমি তখন আল্লাহর কোমর জড়িয়ে ধরবো। উনি ছাড়া কেউ বাচাতে পারবেন না।
৩
ফাজায়েলে হজ্জের বর্ননা।
চাচা কাবা শরিফে বলছে "লাব্বাইক"।
গায়েব থেকে জবাব আসছে "লা লাব্বাইক"।
ভাতিজা পাশে। বলে, "চাচা, শুনছেন না?"
চাচা বলে, "ভাতিজা তুমিও শুনে ফেলেছো?" এতদিন সে একা শুনতো। গোপন থাকতো।
ভাতিজা বলে "চাচা, তবে এত কষ্ট করে লাভ কি?"
চাচা বলে : "তবে আর কোন দরজা আছে যে আমি কড়া নাড়াবো? আর কোনো যাবার জায়গা আছে? তাই কড়া নাড়ি। ৭০ বছর ধরে প্রতি হজ্জে। উনি জবাব দেন "তুমি হাজির না"। কিন্তু আমার যাবার আর কোনো জায়গা নেই। আমি নাড়তেই থাকি।
বলে কান্নায়।
গায়েব থেকে এবার জবাব আসে : তোমার এই হজ্জ কবুল। আগের ৭০ হজ্জও কবুল।
৪
বহু আগে একজন মুরিদের কথা শুনছিলাম। বলছিলেন : আল্লাহ প্রতি প্রচন্ড ভয় আনতে হবে প্রথমে। এর পর আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা আসবে সেই ভয় থেকে। উনি ছাড়া আর কেউ নেই উনার আযাব থেকে বাচাতে।
কথা অপ্রয়োজনে জটিল মনে হয়েছিলো। ঐ সময়ে।
৫
বলছিলাম : স্বল্প রিস্কেও একটা Plan-B রাখি।
অনন্তকালের ফায়সালা। আমার কোনো প্লান বি আছে?
জান্নাত যাদের বাড়ি :
১
জান্নাতে সবার জায়গা ঠিক করে দেয়া আছে। কেউ ঢুকার পরে কনফিউজড হবে না। এত বিশাল জান্নাতে আমার বাড়ি কোন দিকে? সবাই এমন ভাবে নিজের বাড়ি চিনবে যেন যুগ যুগ ধরে সেটাই তার বাড়ি ছিলো। এটাই তার পরিবার।
যদিও সে এই প্রথম প্রবেশ করেছে।
২
ঢুকার গেইট আটটা। এর পরও ঢুকার মুখে প্রতিটা গেইটে এত ধাক্কা-ধাক্কি, এত ভিড় হবে যে একেক জন ঢুকে বলবে হুপস! আমার কাধ যেন ধাক্কায় ছিড়ে যাচ্ছিলো।
হজ্জের সময়ে ভিড়ে যারা পড়েছেন তারা বুঝবেন।
৩
জান্নাতে ঢুকার আগে আল্লাহ তায়ালা সবাইকে জিজ্ঞাসা করবেন তোমরা কি চাও? যে যা চায় তাই দেবে তার জান্নাতে। এর পর শেষে কনফার্ম করবেন "যে যা চাও সব দিয়েছি। আর কিছু আছে?"। মানুষ বলবে "না আমার রব। যা চেয়েছি তার থেকে আরো বেশি দিয়েছেন। সব দিয়েছেন। দুই হাত ভরে দিয়েছেন। আরো কিছু চাওয়ার নেই।" মানুষ কৃতজ্ঞ।
যার আশায় মানুষ কষ্ট করে।
আয়শা রাঃ বলেন রাসুলুলল্লাহ ﷺ বলেন :
مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ
যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালো বাসে, আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাৎ ভালোবাসেন
وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ
আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন
وَالْمَوْتُ قَبْلَ لِقَاءِ اللَّهِ
আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগে হলো মৃত্যু।
- মুসলিম শরিফের হাদিস।
https://sunnah.com/muslim/48/20