বিভিন্ন কিতাবে মৃত্যুর পরে বিভিন্ন লোকদের স্বপ্নে দেখে তার নিকটজনেরা জিজ্ঞাসা করেছে, তোমার সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার করেছে? তারা জবাব দিয়েছেন এই কাজের জন্য ধরা খেয়েছি। ঐ কাজের জন্য পার পেয়েছি এরকম।
এই রকম ঘটনা গুলো বিভিন্ন কিতাব থেকে কালেক্ট করে লিখছি নিজের শিক্ষার জন্য। এক বই ধরে সেটা শেষ হলে পরবর্তি বই এরকম ইনশাল্লাহ।
১
আবু বকর রাঃ এর মৃত্যুের পরে উনাকে স্বপ্নে দেখে একজন জিজ্ঞাসা করলেন "আপনি সব সময় বলতেন এই জিহ্বা আমার উপর বহু কাজের ভার চাপিয়ে দিয়েছে।"
উনি জবাব দিলেন : "হ্যা। এই জ্বিহ্বা দিয়ে আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছি এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে জান্নাত রেখে দিয়েছেন।"
২
ইউসুফ ইবনে হোসায়েন রাহি: কে একজন জিজ্ঞাসা করলেন :
"আল্লাহ আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছে?"
জবাব দিলেন, "আমার উপর দয়া করেছেন।"
"কোন আমলের জন্য?"
"আমি সত্যের সাথে কখনো হাসি তামাশা মিলাতাম না সে কারনে।"
৩
যাররা ইবনে আবু আওফাকে একজন স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন
"কোন আমল আপনি সবচেয়ে উপকারি পেয়েছেন?"
বললেন, "আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা, আর আশা কম রাখা"
- কিমিয়ায়ে সাআদাত।
৪
ইবনে আয়নিয়া বলেন আমার ভাইকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম
"আল্লাহ তোমার সাথে কি রকম ব্যবহার করেছে?"
বললেন, "যে গুনাহের জন্য আমি মাফ চেয়েছি সেই গুনাহ উনি মাফ করেছেন। আর যে গুনাহের জন্য মাফ চাই নি সেগুলো উনি মাফ করেন নি।"
৫
হযরত জুবায়েদকে কেউ স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করেন,
"আল্লাহ আপনার সাথে কি রকম ব্যবহার করেছেন?"
বললেন, "উনি আমার উপর রহম করেছেন।"
"যে সম্পদ আপনি মক্কার পথে ব্যয় করেছিলেন তার জন্য রহম করেছে?"
"না। তার সোয়াব তো ঐ সম্পদের মালিক পেয়েছে। আমি কেবল নিয়তের কারনে সোয়াব পেয়েছি।"
৬
আহমদ ইবনে হাওয়ারি বলেন : আমার স্ত্রী মারা যাবার পরে তাকে স্বপ্নে দেখলাম তার চেহারায় নূর চমকাচ্ছে। এত সৌন্দর্য আমি দেখি নি।"
জিজ্ঞাসা করলাম, "এই সৌন্দর্যের কারন কি?"
বললেন, "মনে আছে ঐ রাতে আপনি আল্লাহর জন্য কান্না করছিলেন?"
"হ্যা।"
"আমি আপনার চোখের পানি নিয়ে নিজের চেহারায় মেখেছিলাম। শুধু এই কারনে।"
৭
জুনায়েদ বাগদাদিকে একজন স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,
"আল্লাহ আপনার সাথে কি রকম ব্যবহার করেছে?"
বললেন, "আমার উপর রহম করেছেন। কিন্তু যে সকল উপদেশ বাণী আর রচনা আমি লিখে গিয়েছি সেগুলো ধ্বংশ হয়েছে। সেগুলোর জন্য আমি কোনো সোয়াব পাই নি। কেবল শেষ রাতে যে দুই রাকাত নামাজ পড়তাম তা কাজে লেগেছে।"
- কিমিয়ায়ে সাআদাত।
৮
আবু সোলায়মানকে একজন মৃত্যুর পরে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন :
"আল্লাহ আপনার সাথে কি ব্যবহার করেছে?"
বললেন, "উনি আমার উপর রহম করেছেন। আমি বুজুর্গ হিসাবে বিখ্যাত ছিলাম এই জিনিসটা আমার ক্ষতি করেছে। অন্য কিছু ক্ষতি করে নি।"
৯
বিখ্যাত বুজুর্গ শিবলির মৃত্যুর ৩ দিন পরে উনাকে স্বপ্নে দেখে একজন জিজ্ঞাসা করলেন
"আল্লাহ আপনার সাথে কি ব্যবহার করেছে?"
বললেন, "আমার খুব কঠিন হিসাব নেয়া আরম্ভ হয়। এটা দেখে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। আমার হতাশা দেখে আল্লাহ তায়ালা আমার উপর রহম করেন।"
১০
সুফিয়ান থাউরিকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন
"আল্লাহ আপনার সাথে কি ব্যবহার করেছে?"
বললেন, "আল্লাহ তায়ালা আমার উপর রহম করেছেন।"
সে আবার জিজ্ঞাসা করলো "আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকের কি অবস্থা?" [কিতাবুল জিহাদের লিখক সম্ভবত]
বললেন, "উনি আল্লাহর দিদাত [সাক্ষাৎ] প্রতিদিন দুই বার করে পান।"
১১
আবু আইয়ুব সেজেস্তানির এলাকার এক ঝগড়াটে লোক মারা যাবার পরে সে লোকের জানাজায় শরিক না হবার জন্য আবু আইয়ুব নিজের ঘরের দোতলায় গিয়ে বসে থাকেন।
এক লোক মৃত লোককে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন
"আল্লাহ আপনার সাথে কি ব্যবহার করেছেন?"
বললেন, "আল্লাহ আমার উপর রহম করেছেন।" এর পর বললেন "আবু আইয়ুবকে বলে দেবে, তোমাদের উপর আমার রবের রহমতের খাজানা বন্টনের দায়িত্ব দেয়া হলেও তোমরা কৃপনতা করে কিছুই বিতরন করতে না।"
- কিমিয়ায়ে সাআদাত
১২
দুই জন লোক। একে অন্যকে কথা দিল যার আগে মৃত্যু হবে আর সে অন্যকে জানাবে আল্লাহ তার সাথে কি ব্যবহার করেছে।
এক জন মারা গেলেন। স্বপ্নে অন্য জনকে দেখে। তাকে বলে :
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করো, মানে ভরসা করো, আর আনন্দিত থাকো। তাওয়াক্কুলের মত এত কার্যকারি আর কিছু নেই।
১৩
সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনাহ। সুফিয়ান থাউরিকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন
: কি কারনে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভালোবেসে?
: মানুষের সাথে সম্পর্ক কম আর উঠা বসা কম করার কারনে।
: আমাকে কিছু নসিহত করেন।
: মানুষের সাথে সম্পর্ক কম রাখতেই উপদেশ দিচ্ছি।
: কিন্তু এও তো বলা আছে, যে ভাতৃত্ব বন্ধু বেশি করো কারন প্রতিটা মুমিন কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে?
: আফসোস তোমার সাথে যদি আমার এই সাক্ষাৎ না হতো! তুমি কি দেখো না মানুষের যত খারাপ সেগুলো তার পরিচিত লোকদের দিয়ে হচ্ছে?
স্বপ্নদ্রষ্টা বলেন এর পর আমি কাদতে কাদতে ঘুম থেকে উঠি।
১৪
এক লোক এক নেক লোককে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন। আপনার সাথে কি ব্যবহার করা হয়েছে?
সে কয়েকটা শের পড়ে জবাব দেয়, অর্থ :
আমাদের আমলনামা হিসাব করা হয়।
এটা খালি আর শুন্য পায়।
এর পর আমাদের উপর রহম করেন।
আমাদেরকে মুক্তি দেন।
বাদশার আচরন উনার গোলামদের প্রতি
এরকম রহমপূর্নই হয়।
আমার মন বলে আর আমার জিহ্বা এ কথা সমর্থন করে
যে ইসলাম নিয়ে মরতে পারবে তাকে আগুনে জ্বলতে হবে না।
- ইবনে সিরিনের স্বপ্নের তাবির/মদিনা লাইব্রেরি।
হাশরের মাঠ। অনেক আলেমের মতে এই দুনিয়াতেই। সবাই জড়ো হবে মাঠের শেষ প্রান্তে যার পরে বিশাল খাদ আর যাওয়া যায় না।
বহুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পরে আকাশ চামড়া ছেড়ার মতো ছিড়ে গেলো। সারি সারি ফিরিস্তারা নেমে আসলো। শেষে আল্লাহ তায়ালা নামলেন।
দিগন্তে কি যেন ফুটে উঠলো। একটু পরিষ্কার হবার পরে সবাই বুঝলো এটা জান্নাত। জাহান্নামকে আনা হলো। এর স্থান খাদের নিচে। কিন্তু জান্নাতে যাবার কোনো রাস্তা নেই।
মু'মিন দ্বিনদ্বাররা অস্থির জান্নাতে যাবার জন্য। কিন্তু হিসাব আরম্ভ না হলে কারো জান্নাতে যাবার উপায় নেই। সবাই নবি রসুলদের গিয়ে বললো আল্লাহ তায়ালাকে বলেন প্লিজ যেন তারাতারি হিসাব আরম্ভ করে। আদম আঃ বললেন আমি পারবো না। নুহ আঃ বললেন একই কথা। ইব্রাহীম আঃ একই। শেষে রাসুলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর অনেক প্রশংসা করে অনুরোধ করলেন।
জাহান্নামে আগুন জ্বালানো হলো। এর উপর একটা ব্রিজ বসানো হলো এটা পুল সিরাত। পার না হয়ে জান্নাতে যাবার উপায় নেই।
কিছু পরে আকাশে ফর ফর কর শব্দ। আসমান ছেয়ে গিয়েছে মেঘের মতো কিছুতে। মানুষের মাথার উপর দিয়ে দ্রুত উড়ে যাচ্ছে। সবগুলো বই। আমলনামা। যার যার হাতে এসে পড়ছে। কারো ডান হাতে কারো বাম হাতে। মানুষ দুই হাতই উচু করে আছে।
কেউ আনন্দে চিৎকার করছে। কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দ।
বিশাল মাটির ধ্বস একদিকে। কাফেরদের একটা বিশাল জামাত হিসাবের আগেই জাহান্নামে পড়ে গিয়েছে। অন্য দিকে মু'মিনদের একটা জামাত পুল সিরাত স্থাপনের পরেই তাতে উঠা আরম্ভ করে দিয়েছে। ওদিকে হিসাব চলছে।
জালেমের আফসোস খুব কম শুনবেন, কারন মৃত্যুর আগে তাদের বোধ লুপ্ত হয়ে যায়। আর এখান থেকে আমাদের শিক্ষনিয় কিছু নেই।
কিন্তু দ্বিনদ্বার আর সাধারন মুসলিমরা কোনটা নিয়ে আফসোস করে সেটা থেকে "অনেক" কিছু বুঝার আছে।
এবং এটা মৃত্যু শয্যায়ও না। তার বার্ধক্যে পৌছে গেলেই তার কথা শুনে বুঝতে পারবেন জীবনে কোন কাজের জন্য সে আফসোস করছে। কোনটা নিয়ে করছে না।
#মৃত্যুর_পরে
পরিক্ষার আগের রাতের পড়া কখনোই হয় না। যা আগে পড়েছি শিখেছি তাই। তাই শেষ সময়ে আমল অনেক বাড়াতে পারবো এমন মনে হয় না। যেমন আগের রাতের পড়া হয় না।
সারা জীবন যা করেছি তাই।
একটা লোকের পাচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে পড়তে ৪ ঘন্টা সময় লাগে প্রতিদিন। সে যদি সেটা না করে মৃত্যুর আগে এক মাস ধরে দিন রাত ইবাদত করে, তবে সে যেন চার মাস নামাজের সময়ের পরিমান ইবাদত করলো।
কিন্তু সে যদি নিয়মিত নামাজ পড়তো তবে নামাজ পড়তো ৪০-৫০ বছর ধরে।
তাই নিয়মিত ইবাদত অনেক বেশি সোয়াবের। পরিমানের দিক থেকেও। সোয়াবের দিক থেকেও। নিয়মতি ইবাদতের বিকল্প শেষ বয়সের কিছু দিনের ইবাদত হয় না।
প্লাস + যে এক মাস বাসায় বদ্ধ থেকে দিন রাত ইবাদত করলো। তার প্রশংসা সমাজে ছড়াবে। সেও মনে করবে "আমি করেছি"। একটা আত্মতুষ্টি।
যে বছর বছর ধরে নিয়মিত নামাজ পড়লো, তার কোনো প্রশংসাও নেই। আত্মতুষ্টিও নেই। যদিও পরিমানের দিকে থেকে সে বেশি।
মৃত্যুর প্রান্তে। সারা জীবন যা করেছি তাই নিয়ে যেতে হবে।
শেষে শুধু তৌবা।
#মৃত্যুর_পরে